আত্মা বিকশিত হয় জ্ঞানে

সুবর্ণ ইসলাম কর্ণার ডেস্ক : বাংলাদেশের ঋতু থেকে বর্ষা-শীত বিদায়ের পথে। কিন্তু আমরা দেখেছি তীব্র বর্ষা ও শীত আমাদের পিছু ছাড়ছে না। তীব্র গরমের কথা আর কী বলব! শীত-গরম কিংবা বর্ষা যাই বলি তা যখন চরম আকার ধারণ করে তখন জীবন দুর্বিষহ-দুঃসহনীয় হয়ে ওঠে। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের শীতও গরমের মতোই তীব্র হবে। কোনো কিছু যখন তীব্র আকার ধারণ করে তখন তা সৌন্দর্য ও নম্রতা হারিয়ে ফেলে। এমনকি ভালোবাসাও যদি তীব্র হয় তখন তা বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষ শিরক করে আল্লাহ কিংবা রসুল (সা.)-এর প্রতি তীব্র ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে। তীব্রতা ক্ষতিকর। এ জন্য রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা খুব বেশি নফল ইবাদত কোরো না, মাঝেমধ্যে বিরতি দিও এবং শরীরের হক আদায় কোরো।’ প্রাচীনকাল থেকে একটি কথা প্রচলিত, নলেজ ইজ পাওয়ার- জ্ঞানই শক্তি। কথাটা অবশ্য ঠিক। তবে সে জ্ঞানও যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায় এবং তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে পড়ে তবে তা অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতি ডেকে আনে। একটি উদাহরণ দিচ্ছি। হজরত মুসা (আ)-এর একজন উম্মত ছিলেন খুবই জ্ঞানী। তার কথা আল কোরআনেও এসেছে। তিনি তাওরাত কিতাবের হাফেজ ছিলেন। একদিন তার আগ্রহ জাগে, আমি আরও বেশি জ্ঞান অর্জন করব। তিনি আল্লাহর নবীকে বললেন, হে আল্লাহর নবী মুসা! আপনি আমাকে রসায়ন সম্পর্কে শিখিয়ে দিন। তখন মুসা নবী তাকে রসায়নবিদ্যা শেখালেন। লোকটি একপর্যায়ে শ্রেষ্ঠ রসায়নবিদ হয়ে গেল। ধনে-জনে সে এত ওপরে উঠল যে তার সিন্দুকের চাবি বহন করার জন্য ৭০টি উটের প্রয়োজন হতো। এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন কার কথা বলা হচ্ছে। সে লোকটির নাম কারুন। লাগামহীন জ্ঞান তার শক্তি না হয়ে বরং জাহান্নামের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ সম্পর্কে আরেকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। আবু জাহেলের উপাধি ছিল আবুল হাকাম বা মহাজ্ঞানী। মক্কার মানুষ তার জ্ঞানে-গুণে মুগ্ধ হয়ে এ উপাধি দেয়। কিন্তু আবু জাহেলের জ্ঞান যখন মাত্রা ছাড়িয়ে ভুল পথে চলে গেল তখন আবু জাহেল সহজ সত্য আল্লাহর নবীকে চিনতে পারল না। আমার এতসব বলার উদ্দেশ্য এই নয় যে মানুষকে জ্ঞান থেকে দূরে রাখা বা জ্ঞানের প্রতি বিমুখ করা। কারণ ইসলাম কখনই জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিরোধী নয়। আল কোরআনের প্রথম শব্দ ইকরা- পড়। কোনো মানুষ না পড়লে বা জ্ঞান অর্জন না করলে প্রভুকে চিনতে পারে না। কিন্তু সে জ্ঞান যদি হয় ভিন্ন, তাহলে ওই জ্ঞান মানুষকে মানুষ না বানিয়ে পশুতে পরিণত করে। জ্ঞান যেমন শক্তি আবার সে জ্ঞানই মানুষকে মূর্খ বানানোর, পশু বানানোর হাতিয়ার হয়ে ওঠে। আজকের পৃথিবীর দিকে তাকালে, বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমার কথা যে মিথ্যা নয় তার প্রমাণ মিলবে। আজ আমরা জ্ঞানের পেছনে অর্থাৎ মেকি জ্ঞানের পেছনে, সার্টিফিকেটের পেছনে, রেজাল্টের পেছনে, চাকরির পড়ার পেছনে এমন পাগলের মতো ছুটছি যে জ্ঞানের উদ্দেশ্যই আমাদের ব্যাহত হচ্ছে। জ্ঞান এসেছে মানুষকে মানুষ বানানোর জন্য। আর এখন আমরা জ্ঞান অর্জন করছি সার্টিফিকেটের জন্য, চাকরির জন্য, পয়সার জন্য। ফলে এখনকার আধুনিক পৃথিবীতে যে মানুষটি সবচেয়ে বড় জ্ঞানী, সে মানুষটিই সবচেয়ে বড় চোর, বাটপাড়, অসভ্য মানুষে পরিণত হচ্ছে। আগে বলা হতো মানুষ ধর্মের জ্ঞান অর্জন করলে সত্যিকারের শুদ্ধ মানুষে পরিণত হয়। জীবনে টাকার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু তাই বলে অর্থই জীবন নয়। অথচ আজকের পৃথিবীর মানুষ অর্থকেই জীবন ভেবে বসে আছে। ফলে তাদের জীবনে অর্থই অনর্থের মূল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অবস্থায় মানুষকে ফিরে আসতে হবে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের দিকে। কোরআন জ্ঞানের সহজ-সরল সঠিক রাস্তাটি মানুষকে দেখিয়ে দেয় এবং সেই জ্ঞানের দিকে যা মানুষকে মানুষের মতো মানুষ বানায়।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

    রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
    ১০১১১২১৩১৪
    ১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
    ২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
    ২৯৩০৩১