আদর্শবান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মরহুম আবদুল মালেক উকিল

Shuborno Provaat - সুবর্ণ প্রভাত
মরহুম আবদুল মালেক উকিল
এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন

এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন : ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানে বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকারের সংগ্রাম, ’৭১-এ স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠনের রাজনীতির উত্তাল ধারায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের যে বিশাল রাজনৈতিক বলয় গড়ে উঠেছিল, সে বলয়ের কেন্দ্রিকতায় বঙ্গবন্ধু তার যে কতিপয় সহকর্মীকে নিয়ে আন্দোলন, সংগ্রাম ও যুদ্ধ পরিচালনার জন্য কমান্ড স্ট্রাকচার তৈরি করেছিলেন আবদুল মালেক উকিল তাদেরই একজন হিসেবে দেশের অন্যতম জাতীয় নেতার মর্যাদায় উন্নীত হয়েছেন।
নোয়াখালী সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামে ১৯২৪ সালের ১ অক্টোবর আবদুল মালেক উকিল জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৭ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার পিতা ধর্মীয় শিক্ষায় আলেম ছিলেন। পিতার সিদ্ধান্তেই তিনি আহাম্মদিয়া হাই মাদ্রাসা থেকে হাইস্কুল মানের শিক্ষা লাভ করেন। ছাত্র হিসেবে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। হাই মাদ্রাসা থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংকে লেটারসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। মেধাবীরা স্বভাবতই সংবেদনশীল হয়ে থাকেন। মালেক উকিল মেধাবী ছিলেন। তাই তিনি স্বভাবতই অতি সংবেদনশীল ছিলেন। সমকালীন রাজনীতির উন্মাতাল ঘটনাপ্রবাহ তার সংবেদনশীল মনে এক ধরনের চাঞ্চল্য ও প্রজ্জ্বলন সৃষ্টি করেছিল।
এ সময়টি ছিল ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তিমকাল। ভারতীয় কংগ্রেস আন্দোলন করছিল ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক শাসকের শৃঙ্খল ভেঙে ভারতকে স্বাধীন করার জন্য। ভারতীয় মুসলিম লীগও তখন ব্রিটিশ বিতাড়নের আন্দোলন করেছিল। কিন্তু তদানীন্তন ভারতের হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান না পেয়ে মুসলিম লীগ ভারতকে বিভক্ত করে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতেও আন্দোলন চালাচ্ছিল। একদিকে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সব ভারতবাসীর দুর্দম আন্দোলন, অন্যদিকে মুসলমানদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এ জটিল ও ত্রিশংকু অবস্থায় ভারতের বৃহত্তম জনবহুল প্রদেশ অবিভক্ত বাংলাদেশের রাজনীতির উথাল-পাতাল ঢেউয়ে গ্রাম-গ্রামান্তর পর্যন্ত উদ্বেলিত, আলোড়িত ও আন্দোলিত হচ্ছিল।
এ সময়ে স্কুল ছাত্র আবদুল মালেক উকিলের তরুণ মন ও সমকালীন রাজনৈতিক দুরন্ত ঘটনাপ্রবাহে আন্দোলিত এবং স্পন্দিত হয়ে ওঠে। মাটি ও মানুষকে কেন্দ্র করে তার সংবেদনশীল মনে এক অনির্দিষ্ট স্বপ্ন হাতছানি দিয়ে যাচ্ছিল। সে স্বপ্ন অনির্দিষ্ট ও অস্পষ্ট হলেও তার সংবেদনশীল মানসিকতার কারণে তিনি তা এড়াতে পারেননি।
ভালো ছাত্র, লেখাপড়া শেষে ভালো চাকরি পাবেÑ এটাই ছিল তার জন্য সহজ-সরল ও নির্ধারিত পথ। কিন্তু স্বভাব নিহিত সংবেদনবোধ ও আবেগসম্পন্ন তরুণ হিসেবে মাটি ও মানুষের ডাকে ‘ভালো ছাত্র হিসেবে ভালো চাকরির নির্ধারিত পথ’ এড়িয়ে তিনি স্কুলজীবনেই তার সমকালীন রাজনীতির বিপজ্জনক ঘূর্ণাবর্তে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
মেধাবী ছাত্রের খ্যাতিবশতঃ নোয়াখালী শহরে স্কুল পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব লাভে তিনি সক্ষম হন। কারণ তখনকার রাজনীতিতে বিশেষ করে ছাত্র রাজনীতিতে মেধার দারুণ কদর ছিল। সকল ছাত্রেরই রাজনীতি করার সমান সুযোগ ছিল। কিন্তু নেতৃত্ব করবে যে ছাত্রটি সে ছাত্রটিকে অবশ্যই মেধাবী হতে হতো। ব্যাপারটা অনেকাংশে এমন ছিল যে, ছাত্র নেতৃত্ব যেন তখন মেধাবীদের সংরক্ষিত বিষয়ই ছিল।
সে যাই হোক কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিক পাশ করে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি কোলকাতা গমন করেন। কিন্তু স্বাধীনতার জন্য তখনো চলমান ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন এবং ভারত বিভক্তির প্রশ্নে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামায় দেশে এক চরম অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হয়। এতে সমকালীন শিক্ষা ব্যবস্থাও লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। তাই কোলকাতায় তিনি লেখাপড়ার সুযোগ পেলেন না ঠিকই, কিন্তু এখানে তিনি ছাত্র রাজনীতির অন্যতম তুখোড় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাহচর্যে আসেন এবং বাংলার মাটি ও মানুষের স্বার্থ ও স্বাতন্ত্রবাদী যে একটা রাজনৈতিক ধারা অবিভক্ত বাংলাদেশে আগে থেকেই চলে আসছিল, আবদুল মালেক উকিল এ সময়ে তার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন।
প্রসঙ্গত, বলতে হচ্ছে অবিভক্ত বাংলাদেশ ভারতের কেবল বৃহত্তম জনবহুল প্রদেশই ছিল না, ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনেরও প্রাণকেন্দ্র ছিল। প্রদেশ হিসেবে অবিভক্ত বাংলাদেশের প্রভাব প্রতিপত্তির বিষয়টিকে কি কংগ্রেস, কি মুসলিম লীগ সব দলের অবাঙালি নেতারা সংশয়, সন্দেহ ও বৈরিতার চোখে দেখতেন। রাজনীতিতে বাংলার মানুষের সাম্প্রদায়িক ঐক্যের সাধক পুরুষ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস এবং ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী আন্দোলন ও সশস্ত্র সংগ্রামের প্রবক্তা নেতাজী সুভাস বসু প্রমুখ বাঙালি হিন্দু নেতারা কংগ্রেসের অবাঙালি নেতাদের ষড়যন্ত্রের কারণে যেভাবে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, অনেকটা সেভাবেই বাংলার সাধারণ মানুষের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং সাম্প্রদায়িকতামুক্ত গণতান্ত্রিক রাজনীতির অমর প্রবক্তা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো অনেক বাঙালি মুসলিম নেতাও মুসলিম লীগের অবাঙালি নেতাদের চক্রান্তে দল থেকে বহিষ্কৃত ও পরিত্যক্ত হয়েছিলেন। ফলে রাজনীতি সচেতন অনেক বাঙালির মনে যে সংশয় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয় তাতে কংগ্রেসে যেমন মুসলিম লীগেও তেমন বাঙালিদের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্রমুখী একটা প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারা তৈরি হয়। নিখিলবঙ্গ মুসলিম লীগে রাজনীতির এ ধারাটি শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও রাজনীতির তাত্ত্বিক নেতা আবুল হাসেমকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছিল। ছাত্র রাজনীতির অঙ্গনে উক্ত ধারাটির নেতৃত্বে ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর একান্ত অনুসারী তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মুজিব।
কোলকাতায় এসে আবদুল মালেক উকিল সেই যে শেখ মুজিবের সাহচর্যে এলেন তারই অবকাশে বাংলাদেশের উপরোক্ত ধারার প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে তার দৃষ্টিভঙ্গির মিল খুঁজে পেয়েছিলেন। বাংলা ও বাঙালির স্বার্থ ও স্বাতন্ত্রের বিষয়ে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির এ অভিন্নতায় শেখ মুজিবের সঙ্গে সেদিনই তার এক আদর্শিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। সে সম্পর্ক তিনি শত উত্থান-পতনের মুখেও আমৃত্যু লালন ও ধারণ করেছেন।
সে যাই হোক আবদুল মালেক উকিল ১৯৪৭ সালে তদানীন্তন যশোর জেলার মাগুরা কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি বিএ ডিগ্রী লাভ করেন এবং ১৯৫২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ শেখ মুজিবসহ অন্যান্য ছাত্রনেতার সঙ্গে তিনি গ্রেফতার হন এবং ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে কারারুদ্ধ জীবনযাপন করেন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার দাবিতে ছাত্রদের মিছিলে গুলি হয়েছিল, তাতে যারা প্রাণ হারিয়েছিলেন সেই শহীদদের স্মরণে যে, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ বাঙালি জাতি শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে থাকে এবং অনাগতকালও যা করে যাবে সে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’র পরদিন ভাষা আন্দোলনের অনেক সহযোদ্ধার সাথে তিনি আবারো গ্রেফতার হন। রাজনৈতিক কারণে তার কারাবাস ও কারাভোগের শুমারী এখানেই শেষ করার জন্য উল্লেখ করতে হচ্ছে যে, মরহুম জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি সর্বশেষ গ্রেফতার হন ও কারাভোগ করেন।
১৯৫২ সালে তিনি নোয়াখালী বারে আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬২ সালে তিনি হাইকোর্ট বারের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৫-১৯৬৬ সালে মালেক উকিল পূর্ব পাকিস্তান এবং পাকিস্তান বার কাউন্সিলের সদস্যও নির্বাচিত হন।
মরহুম মুজিবুর রহমান মোক্তার সাহেবের মৃত্যুতে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যের নোয়াখালী সদরের শূন্য আসনের উপ-নির্বাচনে ১৯৫৬ সালে তিনি এমপিএ নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হন এবং সেবার আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের নেতাও নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালেও তিনি তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হন এবং ঐ সময়ই পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে সংযুক্ত বিরোধীদলের নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) এবং ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৫৬ সালের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে আবদুল মালেক উকিলের পার্লামেন্টারি রাজনীতি শুরু হয়েছিল। সেই যে শুরু হলো সামরিক শাসনের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার মতো ঘটনা, সে দুঃসময়ের নিন্দিত বিরতি ছাড়া পার্লামেন্টারি রাজনীতির আলোকিত উদ্যানে তিনি পরাজিত হননি, ছন্দ হারাননি এবং কখনো পথ হারাননি।
কি সংসদ সদস্য হিসেবে, কি মন্ত্রী হিসেবে, কি স্পিকার হিসেবে তিনি যখন পার্লামেন্টে যে বক্তব্য রেখেছিলেন, তার ধারা বিবরণী পাঠ করলে বলতে কারোরই দ্বিধা হয় না যে, আবদুল মালেক উকিল এক বিদগ্ধ গণতন্ত্রী ও প্রাজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান ছিলেন।
আবদুল মালেক উকিল ১৯৫৩ সালে নোয়াখালী সদর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ১৯৬৩ সালে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সাল থেকে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৬৯ সালে ৯ সদস্যের আওয়ামী লীগ সংসদীয় বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশালের) ১১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৮ সালের ৫ মার্চ তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং একই বছরে তিনি গণঐক্যজোট নামে গঠিত সামরিক শাসনবিরোধী মোর্চার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে তিনি বঙ্গবন্ধু সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ১৯৭৪ সালের ২৮ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে তিনি এমপি নির্বাচিত হন এবং সেই বার আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা এবং মালেক উকিল উপনেতা নির্বাচিত হন।
বিশ্ব রাজনীতির অঙ্গনেও আবদুল মালেক উকিলের ভূমিকা এবং পদচারণা ছিল। তিনি পাকিস্তান আমলে বিরোধীদলীয় পার্লামেন্টিরিয়ান হিসেবে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) সম্মেলনে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে আর্ন্তজাতিক জনমত সংগঠন এবং স্বাধীনতার পর মন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শান্তি সম্মেলনসহ নানা আর্ন্তজাতিক অনুষ্ঠানে যোগদান উপলক্ষে বহুদেশ সফর করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তিনি জার্মানি, ব্রিটেনসহ নানা দেশের বিভিন্ন শহরে সাংগঠনিক সফর করেন।
আবদুল মালেক উকিলের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অসংখ্য কর্মকাণ্ডের কিয়দংশ উপরে উল্লেখ করেছি। এসব তথ্যাবলী সামনে রেখে বলতে গেলে অবশ্যই বলতে হয়, তার রাজনৈতিক আদর্শের আনুগত্যে তিনি সদা অবিচল ও অনড় ছিলেন। বারবার সুযোগ পেয়েও তিনি ক্ষমতার লোভে দল ত্যাগ করেননি, মন্ত্রীও হননি।
বঙ্গবন্ধু তার যেসব রাজনৈতিক সহচরদেরকে নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, সদ্য-স্বাধীন দেশের সরকার চালিয়েছিলেন, তাদের অনেকের মতো আবদুল মালেক উকিলও ধন-সম্পদের জন্য কখনো রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। তাই আবদুল মালেক উকিল ধনের বিচারে ধনী ছিলেন না, কিন্তু নীতির বিচারে ছিলেন নেতা এবং অনিন্দ্য দেশপ্রেম, অনন্য সততা ও অকুন্ঠ আত্মত্যাগের মতো বহু বিরল গুণের বিচারে ছিলেন গুণী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগের ও পরের সংক্ষুব্ধ রাজনীতির ভয়ঙ্কর উত্থান-পতনের অনিশ্চিত ধারায় তৃণমূল থেকে এসে তিনি দেশের বৃহত্তর জনসমর্থিত ও প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা -পরবর্তী স্বৈর রাজনীতির বিপজ্জনক সময়ে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন ও পরিচালনার কাজটি যেভাবে করে গিয়েছিলেন তাতে তার বিরল সাংগঠনিক শক্তি, অসাধারণ মেধা, গভীর প্রজ্ঞা এবং ব্যাপক রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার প্রমাণ পাওয়া যায়। যা নিঃসন্দেহে দেশের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের মূল্যায়ন ও সংরক্ষণে এক মূল্যবান উপাদান হয়ে থাকবে।
তথ্যসূত্র : বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের পুস্তক থেকে সংগৃহীত।
লেখক : নোয়াখালী সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং মরহুম আবদুল মালেক উকিলের ভ্রাতুষ্পুত্র

শেয়ার করুনঃ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

    রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
     
    ১০১১
    ১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
    ১৯২০২১২২২৩২৪২৫
    ২৬২৭২৮২৯৩০৩১