সুবর্ণ ইসলাম কর্ণার ডেস্ক : মানবজাতিকে পথপ্রদর্শন করতে আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাদের দান করেছেন ঐশী প্রত্যাদেশ, যাকে আসমানি কিতাব বলা হয়। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে প্রধান আসমানি কিতাব চারটি : তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিল ও কোরআন। এছাড়া আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন নবীকে একশ’ সহিফা দান করেছেন। সব আসমানি কিতাব ও সহিফার ওপর ঈমান রাখা আবশ্যক। ইরশাদ হয়েছে, ‘(মুত্তাকি তারাই) যারা আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার আগে যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি ঈমান রাখে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৪)
আসমানি কিতাব আল্লাহর অনুগ্রহ : নবী-রাসুলদের ওপর অবতীর্ণ কিতাব ও সহিফাগুলো আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। কেননা এর মাধ্যমে মানুষ তাঁর স্রষ্টার পরিচয় লাভ করে এবং তাঁর পথে চলার শক্তি অর্জন করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি আশা করতেন না যে আপনার ওপর কিতাব অবতীর্ণ হবে। এটা শুধু অপনার পালনকর্তার রহমত। অতএব আপনি অবিশ্বাসীদের সাহায্যকারী হবেন না।’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ৮৬)
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘এটা কি তাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে আমি আপনার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যা তাদের কাছে পাঠ করা হয়, এতে অবশ্যই বিশ্বাসী লোকদের জন্য রহমত ও উপদেশ আছে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৫১)
নবী ও উম্মত সবার জন্য অনুগ্রহ : উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিররা বলেন, আসমানি কিতাব যাঁর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং যে জাতির জন্য অবতীর্ণ হয়েছে সবার জন্য অনুগ্রহ। যেমনটি আয়াতের প্রথমাংশে বলা হয়েছে, ‘হে মুহাম্মদ, আপনি কখনো এ আশা করেননি যে আপনার ওপর কোরআন অবতীর্ণ হবে। কিন্তু আপনার প্রভুর দয়া আপনার ওপর তা অবতীর্ণ করার প্রয়োজন অনুভব করলেন যেন আপনি সারা বিশ্বের জন্য আল্লাহর রাসুল মনোনীত হন। এটি আপনার ওপর অনেক বড় নিয়ামত এবং সর্বোত্তম দান। সুতরাং এ নিয়ামত ও দানের কৃতজ্ঞতা আদায় করুন নৈকট্য অর্জনের মাধ্যমে।’ (আইসারুত তাফাসির : ৬/২৮৭)
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘কোরআন মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি সর্বোচ্চ নিয়ামত এবং তাঁর অসিলায় সমগ্র মানবজাতির জন্য অনুগ্রহ।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৬/২৫৯)
অনুগ্রহ সমগ্র সৃষ্টির জন্য : আসমানি কিতাব এবং কিতাবের ধারক ও বাহক নবী-রাসুলরা সমগ্র সৃষ্টির জন্য অনুগ্রহ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি আপনাকে জগৎগুলোর জন্য রহমতস্বরূপই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ ‘আলম’ তথা জগতের বহুবচন ব্যবহার করেছেন। কোরআনের ব্যাখ্যাকাররা বলেন, আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টি একেকটি জগৎ। যেমন মানুষ, জিন, জলজ প্রাণী, স্থলজ প্রাণী, পাখি, উদ্ভিদ, জড় পদার্থ ইত্যাদি।
সমগ্র সৃষ্টির জন্য অনুগ্রহ যেভাবে : হাদিসে রাসুল (সা.)-কে সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত বা অনুগ্রহ বলা হয়েছে। কেননা আল্লাহর জিকির ও ইবাদত হচ্ছে সমগ্র সৃষ্টি জগতের সত্যিকার রুহ বা প্রাণসত্তা। এ কারণেই যখন পৃথিবী থেকে সত্যিকার রুহ বিদায় নেবে এবং পৃথিবীতে আল্লাহর নাম উচ্চারণের মতো কেউ থাকবে না, কিয়ামত সংঘটিত হবে। আর নবী-রাসুলদের মাধ্যমেই পৃথিবীতে আল্লাহ নামের জিকির অব্যাহত থাকে।
রহমতপ্রাপ্তির শর্ত : আল্লাহর রহমত বা অনুগ্রহ লাভের শর্ত হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর প্রেরিত রহমত ও পথপ্রদর্শক। যাতে আমি (আল্লাহর আদেশ পালনকারী) এক সম্প্রদায়কে গৌরবের উচ্চাসনে আসীন করি এবং (আল্লাহর আদেশ অমান্যকারী) অপর সম্প্রদায়কে অধঃপতিত করে দিই।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৫/৩৮৬)
মানুষ নিজ দোষে অনুগ্রহ হারায় : আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহের দরজা সব মানুষের জন্য উন্মুক্ত করেছেন। কিন্তু মানুষ নিজের কর্মদোষে তা থেকে বঞ্চিত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি তাদের দেখোনি, যারা আল্লাহর অনুগ্রহকে কুফরিতে পরিণত করেছে এবং স্বজাতিকে সম্মুখীন করেছে ধ্বংসের আলয়ে।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ২৮)।
- সর্বশেষ
- সর্বাধিক পঠিত