সুবর্ণ ইসলাম কর্ণার ডেস্ক : সালাম অর্থ শান্তি, প্রশান্তি, দোয়া, কল্যাণ ইত্যাদি। ইসলামে সালাম একটি সম্মানজনক অভিবাদন। সালামের মাধ্যমে মুসলমান পরস্পরের জন্য মহান আল্লাহর কাছে শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করে। সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় সালামের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান রব্বুল আলামিন আমাদের আদিপিতা হজরত আদম (আ.)-কে সর্বপ্রথম সালাম শিক্ষা দেন। এরপর তিনি আল্লাহর হুকুমে ফেরেশতাদের সালাম প্রদান করেন এবং ফেরেশতারাও তাঁর সালামের জবাব দেন। ইসলামের প্রাথমিক যুগে আরব সমাজে ‘আনআমা সাবাহান’ অর্থাৎ সুপ্রভাত বলে একে অন্যকে অভিবাদন জানানোর প্রচলন ছিল। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জাহেলি যুগের ওই শব্দকে রহিত করে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে অভিবাদন জানাতে নির্দেশ প্রদান করেন (আবু দাউদ)।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল ইসলামে উত্তম আমল কোনটি? তিনি ইরশাদ করেন, খানা খাওয়ানো এবং পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দেয়া। (বুখারি)।
নবী করীম (সা.) আরও ইরশাদ করেন, তোমরা রহমানের ইবাদত কর, (মানুষকে) খানা খাওয়াতে থাকো এবং সালামের প্রসার কর। তাহলে (এর বিনিময়ে) নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি)।
হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এক ব্যক্তি এসে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে বসলেন। রসুলুল্লাহ (সা.) সালামের জবাব দিয়ে বললেন, সে ১০টি নেকি পেয়েছে। এরপর আরেকজন সাহাবি এসে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে বসলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, সে ২০টি নেকি পেয়েছে। এরপর আরেকজন সাহাবি এসে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু’ পর্যন্ত বললেন। রসুলে আকরাম (সা.) উত্তর দিয়ে বললেন, সে ৩০টি নেকি পেয়েছে। হজরত মায়াজ ইবনে আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, চতুর্থ এক ব্যক্তি এসে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু ওয়া মাগফিরাতুহু’ বলে বসলেন। রসুল (সা.) উত্তর দিয়ে বললেন, সে ৪০টি নেকি পেয়েছে। (আবু দাউদ, তিরমিজি)।
সম্মানিত পাঠক! কোনো মুসলমানের দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ামাত্রই আগে সালাম বিনিময় করা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হজরত আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহতায়ালার কাছে উত্তম সে যে আগে সালাম দেয়। (আবু দাউদ)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ছোটরা যেন বড়দের সালাম দেয়, পায়ে হাঁটা ব্যক্তি যেন বসে থাকা ব্যক্তিকে সালাম দেয় এবং কমসংখ্যক ব্যক্তি যেন বেশিসংখ্যক ব্যক্তিকে সালাম দেয়। (বুখারি, মুসলিম)।
সালাম দেয়া সুন্নত তবে সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব। মহান আল্লাহ উত্তমরূপে সালামের জবাব দেয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করে আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের অভিবাদন জানানো হয় (সালাম দেয়া হয়), তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তমরূপে অভিবাদন কর (সালামের জবাব দাও) বা তার অনুরূপ বল। (সুরা নিসা, আয়াত ৮৬)।