ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক

Shuborno Provaat - সুবর্ণ প্রভাত
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক

সুবর্ণ প্রভাত প্রতিবেদন : শহীদ ফ্লাইট সার্জেন্ট জহুরুল হকের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের বিষ্ফোরণ ঘটে। যখন ছয় দফা ও ১১ দফা দাবী আদায়ে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলনরত, তখন নোয়াখালীর এই বীর সন্তান পাকিস্তানী সামরিক জান্তার হাতে শহীদ হন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানসহ আগরতলা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হতে তাকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী চাপ প্রয়োগ করলেও তিনি তাদের কাছে নতিস্বীকার করেননি। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় সার্জেন্ট জহুরুল হক ১৭ নাম্বার আসামি ছিলেন। পাকিস্তানিদের কথার অবাধ্য হওয়ায় ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে বন্দি অবস্থায় সার্জেট জহুরুল হককে গুলি করে ও বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করে। এ সংবাদ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে দাবানলের মতো গণআন্দোলন শুরু হয়। যা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়।
বঙ্গবন্ধু যখন ছয় দফা দাবী আদায়ে সারা দেশে রাজনৈতিক সফর শুরু করেন, তখন সার্জেন্ট জহুরও অতিসংগোপনে বিমান বাহিনীতে চাকরিরত বাঙালিদের মাঝে ছয় দফা আন্দোলনের প্রচারনা চালাতে থাকেন। এই কারণে তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হয়ে পাকিস্তানি জান্তাদের হাতে শহীদ হন। এ সাহসী বীর একজন ক্রীড়াবিদ ও চিত্রশিল্পী ছিলেন। তার চিত্রকর্ম জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জহুরুল হক’ নামে একটি ছাত্রাবাস ও নোয়াখালী সদরে তার পিতামহের এলাকা চরমটুয়ায় সার্জেন্ট জহুর নামে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়। এ সড়কটি সংস্কারের অভাবে অবহেলিত এক জনপথ।
শহীদ সার্জেন্ট জহুর ১৯৩৫ সালে নোয়াখালী পৌরসভার সোনাপুরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন মরহুম কাজী মজিবুল হক। তিনি সাবেক এটর্নি জেনারেল মরহুম আমিনুল হকের ছোট ভাই এবং জেলার বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কাজী মাহফুজুল হক মাধুু মিয়ার ভ্রাতুষ্পুত্র। জহুরুল হক ১৯৫৩ সালে নোয়াখালী জিলাস্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিক পাশ করেন ও পরে জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ পাশ করার পর ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। স্বাধিকার আন্দোলনে সার্জেন্ট জহুরের আত্মদানের কথা স্মরণ করে এ জেলার অনেক বিশিষ্টজন বহুবার জেলা প্রশাসন ও উচ্চ পর্যায়ে সার্জেন্ট জহুরুল হকের নামে জেলা শহরের সোনাপুর জিরোপয়েন্টকে ‘সার্জেন্ট জহুরুল হক চত্বর’ নামকরণের দাবি জানালেও তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কেউ এগিয়ে আসেননি।

শেয়ার করুনঃ

976 thoughts on “ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক”

  1. Avatar
    Jeremyfem