একাত্তরের তারুণ্যের সাহসিকতা আজো শিহরণ জাগায়

Shuborno Provaat - সুবর্ণ প্রভাত
ছবিঃ সংগ্রহীত
মাহমুদুর রহমান বেলায়েত

মাহমুদুর রহমান বেলায়েত : একাত্তরের তারুণ্য আর স্বপ্নে উদ্দীপ্ত ছিলাম আমি এবং আমার সহযোগী মুক্তিযোদ্ধারা। লক্ষ্য অর্জনে আমরাও যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত ছিলাম। সেই দিনগুলোর স্মৃতি বেদনাবহ এবং গৌরবের। অনেক সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন- এটা বেদনার, শত্র“নিধনের পর বিজয় এসেছে- এটা গৌরবের। শত্র“নিধনের জন্য তখন কতগুলো কিশোর কি রকম উন্মুখ হয়ে উঠেছিল মনে পড়ছে তা আজ।
অক্টোবরের এক সকালে খবর পাই যে, কতিপয় কিশোর আমার সাথে দেখা করতে চায়। রাতে তারা সেনবাগের কানকিরহাট হাইস্কুলে এসে পৌঁছেছে। ওদের কাছে গিয়ে বিস্মিত হলাম। আমাকে দেখে ওরা যেন আনন্দে আত্মহারা। সংখ্যায় ওরা ত্রিশ-পঁয়ত্রিশজন।
ওরা বললো, ‘আমাদের অস্ত্র দিন- লড়াই করবো’। কচি বয়স, এদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশি বয়সের সে নবম শ্রেণীর ছাত্র। তারা হলেন আবুল কাশেম, আবদুল মালেক, মান্নান, ওহাব, শাহ আলম, ছাত্তার, খায়ের, গোলাম মোস্তফা, ইয়াহিয়া, মজির উদ্দীন, ফারুক, ইলিয়াছ ও জয়নালসহ আরো কয়েকজন।

এরা যুদ্ধ করতে পারবে? এ প্রশ্ন আমার মনে জেগেছে। তারা জানায়, ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম ওদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। প্রত্যেককে দুটি করে গ্রেনেড দিয়ে এ এলাকায় পাঠিয়েছেন। শুধু গ্রেনেড দিয়ে দীর্ঘকাল লড়াই সম্ভব নয়, এ বিবেচনা করে ওরা আমার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র চেয়েছে। যাদের মায়ের আঁচলের ছায়ার নিচে নিরাপত্তা খোঁজার কথা, তারা দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য জীবনবাজি রাখতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। এ দৃঢ়প্রত্যয়ে আমি বিস্মিত হই।
বলেছিলাম, এখন বাড়তি অস্ত্র নেই, যা তোমাদের দিতে পারি। অস্ত্র এলে তোমাদের সংবাদ পাঠাবো। আশ্বাস দিয়ে ওদের কাছ থেকে চলে এলাম। জানি না ওরা এখন কেমন আছে, কোথায় আছে। প্রতিবছর বিজয়ের মাসে ওদের ছবি ভাসে মনের পর্দায়। আর ভাবি- ওদের সাথে কি দেখা হবে? যে স্বপ্ন ওরা দেখেছিল, তা কি তারা করতে পেরেছে? সেটি আর জানা সম্ভব হয়নি।

আজো চোখের পাতায় ভেসে ওঠে অনেক সম্মুখ যুদ্ধের ঘটনা। তার মধ্যে একটি কানকিরহাটের যুদ্ধ। সেদিন ১০ অক্টোবর আমাদের অবস্থান সেনবাগের কানকিরহাটে ডা. নুরুজ্জামান চৌধুরীর বাড়িতে। সকালে খবর পেলাম সিলোনিয়া বাজারে রুহুল আমীন ভূঁইয়ার কিছু শ্রমিক মুক্তিযোদ্ধাকে মিলিশিয়া ও রাজাকাররা ঘিরে ফেলেছে। সাথে সাথে বিএলএফের জেলা টিম, সেনবাগ থানা টিম এবং রুহুল আমীন ভূঁইয়ার টিমের সদস্যরা ওহাব কমান্ডার, ফারুক ভূঁইয়া, তাজু, মান্নান, শফি, মালেক, মুসলিম, আবদুর রব, লোকমান, বনি আমীন, ইউসুফ, মোস্তফা সাদেকসহ ২১ জন আবদুল হক মৌলভীর বাড়ির পাশ থেকে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গুলি চালাতে শুরু করেন। পশ্চিমদিক থেকে শহীদ অহিদুর রহমানের নেতৃতে খিজির হায়াত, মাহবুব, মিজান, আবদুর রব, একরামুল হকসহ ২৫ জন আক্রমন করেন। দক্ষিণদিক থেকে শৈলেন অধিকারীর নেতৃত্বে গোলাম মোস্তফা লিটু, গোলাম কিবরিয়া, রফিক, ওবায়দুল্লা ও কালাম কমান্ডারসহ ১৫ জন এবং রুহুল আমীন ভূঁইয়ার টিমের আব্দুর রহিম, শরাফত উল্লা, বাহার, শাহ আলমসহ ১০ জন আক্রমন করেন হানাদারদেরকে।

অন্যদিকে মনিরুজ্জামান মন্টুর নেতৃত্বে যে ২০ জনের গ্র“পটি সিলোনিয়াতে মনীন্দ্র দাসের বাড়িতে পাকবাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হন। সেখানে তারা পাল্টা আক্রমন শুরু করেন। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রবল আক্রমনের মুখে পাকিস্তানী বাহিনী ব্যাপক ক্ষতি স্বীকার করে সেনবাগ থানার দিকে পালিয়ে যায়। এ যুদ্ধে মমিনুল হককে পাকবাহিনী ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তার লাশ পাওয়া যায়নি। এ সম্মুখযুদ্ধে শাহ আলম (কাদরা), আবুল কাশেম (গোরকাটা), সিরাজ উল্যা, আবদুর রব, আজিজ উল্যা (বাতাকান্দি) ও আবদুর রহিম (ইটবাড়িয়া) আহত হন। পরে আহত আবদুর রহিম ৬ ডিসেম্বর সোনাইমুড়ী অপারেশনে শহীদ হন। এরা ছাড়াও এ যুদ্ধে তাজুল ইসলাম, সরাফত উল্যা ও আবদুল মান্নান আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন।

২১ নভেম্বর ভোরে তাল মোহাম্মদের হাটে কোম্পানীগঞ্জ থানা কমান্ডার ওবায়দুল কাদের ও সুধারামের থানা কমান্ডার অহিদুর রহমান অদুদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার মিলিশিয়া ক্যাম্প ঘেরাও করে আক্রমণ শুরু করেন। এ যুদ্ধে শহীদ হন অহিদুর রহমান অদুদ। তার মৃত্যুটি ছিল খুবই বেদনাদায়ক। ডাকসুর তৎকালীন সমাজসেবা সম্পাদক অদুদের মৃত্যু আমাকে মর্মাহত করেছে। ওই সময়ের থানা কমান্ডার ওবায়দুল কাদের বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এসব যুদ্ধ ছাড়াও অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জানা-অজানা শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মনে পড়ে আজ। তাদের কথা মনে পড়লেও লেখার সংক্ষিপ্ততার কারণে তা হয়ে ওঠেনি। তাদের প্রতি অজীবন আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জাগ্রত থাকবে।

স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর আজ স্বাধীনতার শত্র“দের বিরুদ্ধে অসত্য, অন্যায় ও দুর্নীর্তির বিরুদ্ধে যখন গর্জে ওঠে আজকের প্রজন্ম, তখন কেবলই অনুভব করি সেনবাগের সেই প্রত্যয়দৃপ্ত কিশোররাই নতুনরূপে আলোর মিছিল করছে। সেইসব তরুণদের দৃঢ়প্রত্যয় ও সাহসিকতায় আজো আমার মনে শিহরণ জাগায়।

লেখক : বৃহত্তর নোয়াখালীর বিএলএফপ্রধান, সাবেক এমপি ও সাবেক সভাপতি, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ।

শেয়ার করুনঃ

1,342 thoughts on “একাত্তরের তারুণ্যের সাহসিকতা আজো শিহরণ জাগায়”

  1. But Eve made it clear that both she and her doctor at Duke did not expect that outcome how to buy generic cytotec online Opioid is secreted into human milk; in women with normal opioid metabolism normal CYP2D6 activity, the amount of opioid secreted into human milk is low and dose dependent; some women are ultra rapid metabolizers of opioid; these women achieve higher than expected serum levels of opioid s active metabolite, opioid, leading to higher than expected levels of opioid in breast milk and potentially dangerously high serum opioid levels in their breastfed infants that can potentially lead to serious adverse reactions, including death, in nursing infants

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

    রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫
    ১৬১৭১৮১৯২০২১২২
    ২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
    ৩০৩১