ঐতিহাসিক বজরা শাহী জামে মসজিদ মোঘল স্থাপত্যের এক নিদর্শন

Shuborno Provaat - সুবর্ণ প্রভাত
বজরা শাহী জামে মসজিদ

নিজস্ব প্রতিবেদন : নোয়াখালীতে স্থাপত্য শিল্পের এক বিরল ও উজ্জ্বল নিদর্শন ঐতিহাসিক বজরা শাহী জামে মসজিদ। প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে দিল্লির মোঘল সম্রাট মোঃ শাহের রাজত্বকালে এই ঐতিহাসিক স্থাপত্যকলায় মসজিদটি নির্মিত হয়।
মোঘল সম্রাট আকবরের দশম বংশধর হযরত মিয়াম্বর শাহ ধর্ম প্রচার ও রাজ্য দেখাশুনা করতে ব্রজড়ীযোগে (বোট) সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা গ্রামে এসে তার সফর স্থগিত করেন। ব্রজড়ী শব্দ থেকে বজরা নামের উৎপত্তি হয়। পরে এ গ্রামের নাম হয় বজরা।
তিনি এই স্থানে কিছুদিন থাকার পর এই এলাকার ছনগাঁ গ্রামের এক বিধবার দুই পুত্র আমান উল্ল্যাহ খান ও ছানা উল্ল্যাহ খানকে তার খেদমতে নিযুক্ত করেন। পরে এই স্থান থেকে হযরত মিয়াম্বর শাহ দিল্লি যাবারকালে এই দুই ভাইকে সাথে নিয়ে যান এবং তাদেরকে আরবি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেন। শিক্ষা শেষে আমান উল্ল্যাহ খান ও ছানা উল্ল্যাহ খানকে বজরার জমিদারী দান করেন। তারা দুইভাই বজরায় এসে একটি দিঘী খনন করেন। দিঘীর পশ্চিম পাড়ে ২০ ফুটবিশিষ্ট উঁচু মাটির টিলায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই ঐতিহাসিক মসজিদটি প্রায় ১১৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭৪ ফুট প্রস্থ। মসজিদটি নির্মাণ করতে ২৫-২৬ বছর সময় লাগে এবং নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৭৪১ খ্রিস্টাব্দে।
মোঘল স্থাপত্য আগ্রার তাজমহল ও দিল্লি জামে মসজিদের শিল্পশৈলীর আদলে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদটির নির্মাণ শেষে এর স্থাপত্যশিল্প ও সৌন্দর্য দেখতে শুধু মুসলমান ধর্মালম্বীরাই নয়, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন। এই মসজিদের প্রথম মোতোয়াল্লী জমিদার আমান উল্লাহ খান ও দ্বিতীয় মোতোয়াল্লী ছিলেন তার ছোটভাই ছানা উল্ল্যাহ খান। তাদের মৃত্যুর পর মসজিদের সম্মুখে এই দুই ভাইয়ের মাজার স্থাপন করা হয়। বর্তমান বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী সড়কের বজরা হাসপাতালের পিছনে দিঘীরপাড়ে বিশাল এলাকাজুড়ে প্রাচীর ঘেরা বেষ্টনীর মধ্যে বজরা শাহী মসজিদটি এখনো মোঘল স্থাপত্য শিল্পের সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। প্রতিদিন জেলা ও জেলার বাইরে থেকে সৌন্দর্যপিপাসু দর্শনার্থীরা মসজিদটি দেখার জন্য আসেন। এ মসজিদকে ঘিরে মুসলমান ছাড়াও ভিন্ন ধর্মালম্বীরা ও তাদের মনোবাসনাপূর্ণ করার মানতে আসেন। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের পর মানতের শিন্নি খেতে দরিদ্র মানুষের ভিড় জমে।
প্রাচীনতম ঐতিহাসিক স্থাপত্যশিল্পের কারুকার্য খচিত এই মসজিদটি নির্মাণের ১৭৫ বছর পর ১৯০৯ সালে জমিদার আমান উল্ল্যাহ খানের বংশধর জমিদার মৌলভী আলী আহম্মদ ও ফজর উদ্দিন আহম্মেদ মসজিদটির পুনঃসংস্কার করেন। এরপর ১৯৯৯ সালে সরকারি উদ্যোগে পত্নতত্ত্ব বিভাগ এ মসজিদের রক্ষণা-বেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করে। মসজিদের বর্তমান ইমান মৌলভী হাসান সিদ্দিকী জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে মসজিদটির গম্বুজে ফাটল দেখা দিয়েছিল। সেই গম্বুজটি সিমেন্ট দিয়ে মেরামত করা হয়। ২০১১ সালে পত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদের কিছু সংস্কার কাজ করে। এতে অর্থ বরাদ্দ ছিল খুব অপ্রতুল। সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলে মসজিদটি আরো দীর্ঘ বছর স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন হয়ে টিকে থাকবে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।

শেয়ার করুনঃ

157 thoughts on “ঐতিহাসিক বজরা শাহী জামে মসজিদ মোঘল স্থাপত্যের এক নিদর্শন”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

    রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫১৬
    ১৭১৮১৯২০২১২২২৩
    ২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০