চৌমুহনীতে মন্দির ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, আহত অর্ধশতাধিক ১৪৪ধারা জারি

নিজস্ব প্রতিনিধি

নোয়াখালীর প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনীতে মসুল্লিদের মিছিল থেকে শহরের হিন্দু সম্প্রদায়ের দোকানপাট, ১০টি মন্দির ও বেশকিছু বাসা-বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর  এবং মন্দির, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।  আজ শুক্রবার দুপুর দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় যতন সাহা (৪২) নামে একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে বেগমগঞ্জে থানার ওসি ও চার পুলিশসহ অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিআর সেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে। এ ছাড়া আগামিকাল শনিবার চৌমুহনী পৌরসভা এলাকায় সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননার প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে জুমার নামাজ শেষে কয়েক হাজার  উৎশৃঙ্খল মসুল্লি চৌমুহনী শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলকারীরা প্রধান সড়কের এসে কলেজ রোডসহ অন্যান্য এলাকায় মন্দিরের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের ওপর বৃষ্টিরমত ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশ পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ সময় মিছিলকারীরা শহরের সড়কের দুইপাশে হিন্দুদের দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুর চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মিছিলকারীরা শহরের কলেজ রোডে ঢুকে পড়ে আশেপাশের অনেক দোকানে এবং ষ্টেশনের পূর্ব পাশের রাম ঠাকুর আশ্রম, কলেজ রোডের রাধা মাধব জিওর মন্দির, ইস্কন মন্দিরসহ সবগুলো মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া বাসাবাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে। তাঁরা এ সময় মন্দিরের সামনে ও আশেপাশে থাকা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে পিটিয়ে আহত করে। এ সময় ইস্কন মন্দিরে থাকা যতন সাহা নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। তিনি ইস্কন মন্দিরে থাকতেন।

জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খিস্টান ঐক্যপরিষদের আহ্বায়ক বিনয় কিশোর রায় জানান, চৌমুহনীতে অতীতে কখনো হিন্দুদের দোকানপাট, মন্দির ও বাসাবাড়িতে এমন হামলার ঘটনা ঘটেনি। দুপুর দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত হামলা-ভাঙচুরের তান্ডব চলেলও প্রশাসন কিছুই করতে পারেনি। হামলার ঘটনায় ইস্কন মন্দিরে যতন সাহা নামে একজন মারা যায়। এ ছাড়া হামলায় অসংখ্য লোক আহত হয়েছেন।

বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহ এমরান জানান, জুমার নামাজের পর বিভিন্ন মসজিদ থেকে মুসল্লিরা মিছিল নিয়ে বের হয়। মিছিলকারীরা একত্রিত হয়ে চৌমুহনী প্রধান সড়কের দুইপাশের দোকানপাট, এবং বিভিন্ন এলাকার মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর  চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিআর সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় বেগমগঞ্জ থানার ওসি কামরুজ্জামান সিকদার ও চার পুলিশ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান জানান, নতুন করে সহিংসতা এড়াতে শনিবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চৌমুহনী পৌরসভা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বর্তমানে বিজিবি, র‌্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। তিনি জানান, হামলার ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় একজন জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছে। তবে একজনের মৃত্যুর বিষয় তিনি নিশ্চিত করেননি।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আরএমও সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম জানান, বিকেলে চৌমুহনীতে হামলার ঘটনায় যতন সাহা নামের এক ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। এ ছাড়া চার পুলিশসহ পাঁচজনকে আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

    রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
    ১০১১১২১৩১৪
    ১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
    ২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
    ২৯৩০৩১