জাতীয় রাজনীতিতে নোয়াখালীর ভূমিকা

Shuborno Provaat - সুবর্ণ প্রভাত

 

অধ্যাপক মোহাম্মদ হানিফ

অধ্যাপক মোহাম্মদ হানিফ : ব্রিটিশরা যখন ভারত ছেড়ে চলে যায়, তখন ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়। আমরা যে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাজনীতি করছি, ব্রিটিশদের এই শাসনের ফলে তার উদ্ভব হয়েছে। ভারত ছেড়ে যাওয়ার প্রাক্কালে তখন ব্রিটিশ সরকার নির্বাচন দিয়েছিল। মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের সুযোগ থাকায় তারা ভারত বিভক্ত ও পাকিস্তানের পক্ষে ম্যান্ডেট দিতে পেরেছে। যার ফলে সে বছরের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বাংলাকে উর্দুর সাথে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বের হওয়া মিছিলে কয়েকজন ছাত্র শহীদ হলে পূর্ব পাকিস্তানের জনমত ক্ষমতাসীন পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে চলে যায়। এরপর ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে সারা দেশের মতো নোয়াখালীতেও কেবল হাতিয়া দ্বীপ ছাড়া সব আসনেই নৌকা প্রতীক নিয়ে যুক্তফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থীরা জয়লাভ করেন।
নোয়াখালীতে নির্বাচিতরা হলেন মরহুম মজিবুর রহমান মোক্তার (সদর), এডভোকেট মরহুম সিরাজ উদ্দিন (বেগমগঞ্জ পূর্ব), মরহুম রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী (বেগমগঞ্জ পশ্চিম), মরহুম জিল্লুর রহিম (লক্ষ্মীপুর), মরহুম মোহাম্মদ তোহা (রামগতি), মরহুম মাওলানা আবদুল হাই (হাতিয়া, মুসলিম লীগ), মরহুম গোলাম সারোয়ার হোসাইনী (রামগঞ্জ), মরহুম ডা. নুরুজ্জামান চৌধুরী (সেনবাগ-কোম্পনীগঞ্জ), মরহুম খাজা আহাম্মেদ (ফেনী), প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম আবদুস সালাম (ফেনী), মরহুম আবদুল জব্বার খদ্দর (ফেনী)।
এসব নেতাদের মধ্যে জেলা সদরের মজিবুর রহমান মোক্তার ও ফেনীর খাজা আহামেদ তৃণমূলে সবচেয়ে লড়াকু জননেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দৈনিক অবজারভারের সম্পাদক আবদুস সালাম ঢাকায় কর্মরত থেকেও গণমানুষের সেবা করার জন্য সর্বমহলে সমভাবে সম্মানিত ছিলেন। মোহাম্মদ তোহা ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ১৯৫৪ সালে এমপিএ নির্বাচিত হওয়ার পর বাম রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ভূমিকা পালন করে নোয়াখালীর মানুষের স্থায়ী সমস্যা, বিশেষ করে তখনকার সময় নদীভাঙন সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালনের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। কিন্তু বাম রাজনৈতিক দর্শনের সর্বহারার বিপ্লবের তত্ত্ব বাস্তবায়নে গোপন মিশনে জড়িয়ে তিনি ১৯৫৮ সালে আত্মগোপনে চলে যান। ফলে তিনি গণমানুষের স্মৃতি থেকে অপসৃত হয়ে যান। স্বায়ত্তশাসন ও গণতন্ত্রের দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন কমিউনিস্ট বিপ্লবের গোপন পথে গেল না। বরং গেল প্রথমে ৬ দফা, পরে ১১ দফা অর্থাৎ বাঙালির সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত বিদ্রোহের পথে, যে পথে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ে সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়ে বাঙালি আঞ্চলিক জাতিত্ব, আন্তর্জাতিক জাতীয়তার মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক আহ্বানের পর ২৬ মার্চে স্বাধীনতা ঘোষণা ও ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের পরই জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার পথে ইতিহাসে বাঙালি জাতি একমাত্র বিপ্লবী জাতি হিসেবে স্বীকৃত ও চিহ্নিত হয়ে আছে। রাজনীতিতে একান্ত আত্মপ্রতারক না হলে কে-না স্বীকার করবে যে বাঙালির এই বিপ্লবের রূপকার হচ্ছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ সময় নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল, মোহাম্মদ উল্যা, আবদুর রশিদ, নুরুল হক কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ছিলেন।
জাতির জনক বন্ধবন্ধু শেখ মুজিবের রাজনৈতিক লক্ষ্য, তার সাংগঠনিক নীতি ও আন্দোলন-সংগ্রামের কৌশল ইতিহাসের এক চমকপ্রদ বিষয়। সারা দেশের জেলায় জেলায় তার সহকর্মী-সহচরদের একটা নেটওয়ার্ক তিনি গড়ে তুলেছিলেন। সেটা ছিল দ্বি-স্তরবিশিষ্ট সাংগঠনিক একটি কাঠামো। তার প্রথমটি ছিল আওয়ামী লীগ অপরটি ছিল ছাত্রলীগ। নোয়াখালীতে শেখ মুজিবুর রহমানের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাংগঠনিক সারথি ছিলেন মরহুম আবদুল মালেক উকিল (পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্পিকার), মরহুম নুরুল হক, মরহুম আবদুর রশীদ, মরহুম খাজা আহমেদ, মরহুম শহীদ উদ্দিন এস্কান্দার কচি মিয়া।
এদের মধ্যে শহীদ উদ্দিন এস্কান্দার কচি ছাড়া অবশিষ্ট চার নেতাদের সাথে ১১ দফা আন্দোলনের অন্যতম নেতা খালেদ মোহাম্মদ আলী, আমি অধ্যাপক মোহাম্মদ হানিফ, এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন ও প্রিন্সিপাল ওবায়েদ উল্যা মজুমদারÑ এ চারজনসহ মোট ৮ জনকে সত্তরের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য পদে মনোনয়ন দেয়া হয় এবং প্রত্যেকেই এমএলএ নির্বাচিত হন।
প্রাদেশিক পরিষদের ১৪টি আসনে মরহুম শহীদ উদ্দিন এস্কান্দার কচি মিয়া (সদর), মরহুম সাখাওয়াত উল্যাহ্ এডভোকেট (দক্ষিণ বেগমগঞ্জ), মরহুম রফিক উল্যা মাস্টার (উত্তর বেগমগঞ্জ), মরহুম আবদুস সোবহান (সেনবাগ), মরহুম আবু নাছের চৌধুরী (কোম্পানীগঞ্জ ও ফেনীর দাগনভূঁঞা), তালেব আলী (সোনাগাজী), মরহুম এডভোকেট খয়ের উদ্দিন (ফেনী), মরহুম আবদুস সাত্তার সাফদার (পরশুরাম), মরহুম আবদুল মোহাইমেন (লক্ষ্মীপুর), মরহুম বিসমিল্লা মিয়া এডভোকেট (লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ), মরহুম এ এন এ চৌধুরী কালু মিয়া (রামগঞ্জ), মরহুম এডভোকেট মোহাম্মদ উল্যা (সাবেক রাষ্ট্রপতি, রায়পুর), সিরাজুল ইসলাম (রামগতি)। শুধু অধ্যাপক অলি উল্যাহ (হাতিয়া) ছাড়া অন্য আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা সকলেই বিজয়ী হন। শুধু হাতিয়াতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মরহুম আমিরুল ইসলাম কালাম বিজয়ী হয়েছেন। পরে আমিরুল ইসলাম কালাম মুক্তিযুদ্ধের শেষে ’৭২ এ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এমসিএ এবং ’৭৩-এ আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হন। তবে ’৭৫-এর পর তিনি আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে ক্ষমতাসীন দল বিএনপিতে যোগ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন।
পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের বিরুদ্ধে বৈষম্য, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত বিষয় হয়ে গিয়েছিল। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে ও গণতন্ত্রের দাবিতে ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব যে ৬ দফা দাবি দিয়েছিলেন এই নির্বাচনের ফলাফলকে আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেট বা রায় হিসেবে গণ্য হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের এই নির্বাচন প্রদত্ত রায় ছিল একক ও নিরঙ্কুশ। তাই এই জনরায় মেনে ৬ দফার ভিত্তিতে পাকিস্তানের সংবিধান রচনা করতে শাসকগোষ্ঠিকে বাধ্য করতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের পর থেকেই আন্দোলন চালাচ্ছিল। সারা পূর্ব পাকিস্তানে সব জেলার মতো নোয়াখালীতে নির্বাচিত এমএনএ এবং এমপিএ গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং জনগণকে সম্ভাব্য যুদ্ধ মোকাবেলার জন্য সংগঠিত করেছেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনার এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী পাকিস্তানের সশস্ত্র আক্রমণ মোকাবেলার কাজে দেশের ছাত্র-শ্রমিক ও যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণসহ নানাভাবে সংগঠিত করেছিল। আবদুল মালেক উকিল, নুরুল হক, খাজা আহাম্মদ, আবদুর রশিদ জেলার জৈষ্ঠ্য নেতাদের নেতৃত্বে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও শ্রমিক লীগের নেতাদের নিয়ে জনগণকে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে উদ্বুদ্ধ, সতর্ক ও সংগঠিত করার কাজটি যথাযথভাবে করেছেন বলেই তো নোয়াখালীর মুক্তিকামী সংগ্রামী মানুষ স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোচিত ভূমিকা পালন করতে সক্ষম ও সফল হয়েছেন। সেই সাফল্যের ধারাবিবরণী সংযোজনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, নোয়াখালীর মানুষের দেশপ্রেম ও বীরত্ব যথাযথভাবে স্বীকৃত হয়েছে। এই স্বীকৃতি আমাদের পক্ষে যেমনি একান্ত গৌরবের, তেমনি অব্যক্ত আন্দোলনেরও। প্রিন্সিপাল ওবায়েদ উল্যা মজুমদার এমএনএ স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে পাকিস্তানীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে মীরজাফরের কালিমা লেপন করেছেন।


১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু আমাকে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীপ্রধান করেছিলেন। লেখাপড়া শেষ করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা বেরিয়ে এসেছেন সেসব যুব নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে সম্পৃক্ত করার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আমি এমএলএ নির্বাচিত হওয়ার পর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন মাহফুজুল বারি, রায়পুরের ফজলুল করিম, লক্ষ্মীপুরের শাহজাহান কামাল ও সদরের ফজলে এলাহী। মাহফুজুল বারী পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে চাকরিরত থাকতেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
সে সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রধান রাজনৈতিক সচিব ছিলেন রফিক উল্যা চৌধুরী। তিনি ১৯৫৮ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এ সময় ছাত্রদের আন্দোলন যুদ্ধমুখী করার কাজটি পরিচালনা করতেন জাতীয় পর্যায়ের ৪ ছাত্রনেতার মধ্যে নোয়াখালীর অন্যতম সিরাজুল আলম খান। তার সাথে ছিলেন খালেদ মোহাম্মদ আলী, ডাকসুর ভিপি আসম আবদুর রব ও মোস্তাফিজুর রহমান। তাদের সাথে জেলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাহমুদুর রহমান বেলায়েত, মরহুম কাজী মোঃ সোলায়মান এডভোকেট, শহীদ অহিদুর রহমান অদু, জয়নাল হাজারী, ওবায়দুল কাদের, গোলাম সারোয়ার, এডভোকেট মরহুম মোস্তাফিজুর রহমান লুতু ও ভিপি মোহাম্মদ উল্যা। সে সময়ে আদমজি জুটমিলের শ্রমিক আন্দোলনের নেতা ছিলেন নোয়াখালীর মরহুম সাইদুল হক ছাদু। জাতীয় রাজনীতিতে তার ভূমিকা ছিল অনন্য। নোয়াখালীর মরহুম হাজী ইদ্রিস মিয়া এবং মরহুম এমএ আজিজ জননেতা মরহুম আবদুল মালেক উকিলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
ষাটের দশকে মুসলিম লীগের নেতৃত্বে নোয়াখালীতে যাদের দেখেছি তারা হচ্ছেনÑ মরহুম রুহুল আমিন এডভোকেট, মরহুম মানছুরুল হক এডভোকেট, ডা. কে এম হোসেন, মরহুম মাকসুদ মোক্তার, মরহুম সিরাজুল হক বিএ, মরহুম সিরাজুল ইসলাম টি কে, মরহুম শামসুল হক মোক্তার, মরহুম মাওলানা আবদুল হাই (হাতিয়া), মরহুম আবুল খায়ের (রামগতি), এডভোকেট আলী আজ্জম (বেগমগঞ্জ), হারিছ মিয়া (লক্ষ্মীপুর), ডা. মজিবুল হক (রামগঞ্জ) প্রমুখ। এসব নেতাদের মধ্যে এডভোকেট রুহুল আমিন, এডভোকেট মনসুরুল হক, ডা. কে এম হোসেন, মাওলানা আবদুল হাই বিডি (মৌলিক গণতন্ত্র) সিস্টেমে এমএনএ নির্বাচিত হন। এডভোকেট আলী আজ্জম, আবুল খায়ের, হারিছ মিয়া, ডা. মজিবুল হক প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। তাদের মধ্যে ডা. কে এম হোসেন নোয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ছিলেন উদার মনমানসিকতা সম্পন্ন, সহনশীলতা, আভিজত্য ও বিনয়ের মতো চারিত্রিক গুণাবলি থাকার কারণে মুসলিম লীগের হয়েও নিজেকে দলীয় বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে পেরেছেন। তিনি একজন সমাজকর্মী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ডা. কেএম হোসেন চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত থেকে গরীব মানুষের সেবা করে গেছেন।
বাংলাভাষা, গণতন্ত্র, পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে এবং সামরিক-বেসামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বাম রাজনীতির নেতাকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। বাম নেতাদের মধ্যে একলাশপুরের মুকবুল আহাম্মেদ একজন দক্ষ কমিউনিস্ট ছিলেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৬২ সালে দেশে সামরিক শাসনকালে গ্রেফতার এড়াতে আমি বাম রাজনীতির সক্রিয় আত্মগোপনকারী নেতা মরহুম নুরুল হক চৌধুরী (মেহেদী) তত্ত্বাবধানের আত্মগোপন করি। তিনি ’৫৬ সালে নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ সময় অধ্যাপক ইয়াকুব, মরহুম মাওলানা খালেদ সাইফুল্যাহ্ ও মরহুম মোহাম্মদ তোহার সাথে আমার পরিচয় হয়। পরে বাম নেতাদের সাথে আমার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে উঠে। মরহুম আবদুল হাদি, মরহুম কমরেড শেখ আবদুল হাই এডভোকেট, এডভোকেট জয়নাল আবদিন, অধ্যক্ষ মরহুম শাহজাহান, মরহুম আবু সাইদ, এডভোকেট সারওয়ার-ই-দ্বীন তারা সবাই ভোটাভুটির রাজনীতি বিশ্বাস না করলেও সামরিক-বেসামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে স্বায়ত্তশাসন ও গণতন্ত্রের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমানের বিএনপি ও এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে নোয়াখালী জেলা এবং জাতীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, সাবেক মন্ত্রী মাহবুবুর রহমান এডভোকেট, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসমাইল এডভোকেট, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) আবদুল মান্নান। সাবেক এমপিদের মধ্যে মরহুম মোস্তাক আহমেদ ও মোঃ শাহজাহান, বরকত উল্যাহ্ বুলু, জয়নাল আবদীন ফারুক, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ফজলুল আজিম। বর্তমানে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মোঃ শাহজাহান, বরকত উল্যাহ্ বুলু, জয়নাল আবদিন ফারুক, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতির নেতৃত্বে রয়েছেন।
ভারতের স্বাধীনতা ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের সাথে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ যেভাবে জড়িত, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে আওয়ামী লীগও সেভাবে জড়িত। সেই আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মরহুম আবদুল মালেক উকিলের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সভাপতি মরহুম রফিক উল্যাহ চৌধুরীর কন্যা ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার নিযুক্ত হন। এক সময়ের জেলার মেধাবী ছাত্রনেতা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের জাতীয় রাজনীতিতে এখন একজন প্রতিষ্ঠিত নেতা। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ওবায়দুল কাদের নোয়াখালী-০৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসনের এমপি। তিনি ছাড়া আওয়ামী লীগের অপর পাঁচ এমপির মধ্যে রয়েছেনÑ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-০৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী, নোয়াখালী-০৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ, নোয়াখালী-০২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী) আসনের এমপি মোরশেদ আলম, নোয়াখালী-০১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনের এমপি এ এইচ এম ইব্রাহিম ও নোয়াখালী-০৬ (হাতিয়া)’র এমপি আয়েশা ফেরদৌস। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হচ্ছেন অধ্যাপক খায়রুল আনম সেলিম। সেনবাগ, বেগমগঞ্জ ও সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাড়া অন্য ৬ উপজেলায় আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সোনাইমুড়ী পৌরসভা ছাড়া অন্য ৭ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের পৌর মেয়ররা অধিষ্ঠিত রয়েছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন, ১৯৪৯ সালে ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ঢাকায় আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হওয়ার পর অন্যান্য জেলার মতো ১৯৫০ সালে নোয়াখালীতেও প্রথম সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়। প্রথম জেলা কমিটিতে সভাপতি বেগমগঞ্জের ঘাটলার সিরাজ উদ্দিন উকিল ও হাজীপুরের সুরুজ মিয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেকান্দর উকিল আওয়ামী লীগে যোগদান করার পর তিনি জেলা কমিটির সভাপতি ও সিরাজ উদ্দিন উকিল সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগে এদের অবদান স্মরণীয়।

লেখক : প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক এমপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি

শেয়ার করুনঃ

295 thoughts on “জাতীয় রাজনীতিতে নোয়াখালীর ভূমিকা”

  1. Combine and blend in a blender or food processor: chopped lemons skin, seeds, and all, with approximately 1 tablespoon of cold-pressed olive oil per lemon, and some distilled water.
    Consumers are aware of low price of ivermectin medication from one of these pharmacies
    Safety of CAMs Herbal products Diet supplements Alternative diets Finding a therapist Cost Info on the web Finding more info What to ask Research About research What’s new What to ask Therapies Acupuncture Aloe Aromatherapy Art therapy Ayurvedic medicine Black cohosh Carctol Chaparral Chiropractic Echinacea Essence therapy Essiac Gerson therapy Green tea Healing Herbal medicine Homeopathy Hypnotherapy Laetrile Massage therapy Macrobiotic diet Meditation Music therapy Osteopathy Reflexology Reiki Shark cartilage Shiatsu St John’s wort Traditional Chinese medicine Visualisation Yoga About this section Reading list Organisations Causes of cancer Find a clinical trial You can find information on this page about What DVT is Symptoms of DVT Who is at risk Treating blood clots Reducing the risk of DVT while in hospital Other tips for preventing DVT What DVT is Deep vein thrombosis DVT is a blood clot that develops in the deep veins of the body.

  2. Angel July 21, 2015 at 8:39 pm – Reply I just got my labs back thyroid panel was normal also low on vitamin D, and adrenal low or high….
    Successful treatment is available when you citizens rx pharmacy pills quoted here are amazing
    People with panic disorder may have some of the following reactions after a series of panic attacks:The panic attacks themselves are all-consuming while they last and can include:Panic disorder is treatable, often with cognitive behavioral therapy, antidepressant medication, or both.

  3. Compare Surgeries Compare All Surgeries Lap Band Vs Gastric Bypass Videos Gastric Bypass Gastric Bypass Overview Gastric Bypass Cost Gastric Bypass Complications Gastric Bypass Complications Gastric Bypass Side Effects Hair Loss After Gastric Bypass Gastric Bypass Mortality Gastric Bypass Revision Gastric Sleeve Gastric Sleeve Overview Gastric Sleeve Cost Gastric Sleeve Procedure Gastric Sleeve Complications Lap Band Lap Band Overview Lap Band Cost Lap Band Procedure Lap Band Results Lap Band Complications Lap Band Complications Lap Band Surgery Failure Lap Band Erosion Lap Band Removal Lap Band Revision Options Duodenal Switch Revision Surgeries Gastric Bypass Revision Bypass Revision Overview Sclerosant Injection StomaphyX ROSE Procedure Add Gastric Band Lenthen Roux Limb Convert to Duodenal Switch Lap Band Revision Lap Band Removal Lap Band Revision Surgery Experimental Procedures Experimental Overview EndoBarrier Gastric Plication Implantable Maestro System POSE Procedure Transoral Gastric Volume Red.
    Buying a 5mg tadalafil and various payment options when you buy online.
    Bladder infections may arise without any of the multitude of predisposing factors being present but this is more likely to occur in acute infectious cystitis.

  4. Antibiotic children Physical activity benefits late-life health Healthier life for New Year’s resolution December 2009 Autism epidemic worsening: CDC report Rosuvastatin indication broadened High-protein diet effects November 2009 Folic acid cancer risk Folic acid studies: message in a bottle?
    Make sure that when you how to use sildenafil citrate tablets from the Internet.
    Related Features: Common Causes and Cures for Tummy Aches 10 Reasons to Call the Doctor Now The Panicky Parent’s Guide to Kids’ Health Next: Tricky Complications Tricky Complications Surgeons have two methods for removing an appendix, both of which are performed under general anesthesia and take from 30 to 60 minutes.

  5. As a rule, an average of the ambulatory blood pressure readings gives the most true account of your usual blood pressure.
    the pricesAlways ask if you get something new when you buy online pharmacy uk will be right online.
    Download Connect with a Healthcare Professional Attend a Fresenius Medical Care Treatment Options Program TOPs in your area to discover resources, information, and support available to you and your family.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

    রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
     
    ১০১১
    ১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
    ১৯২০২১২২২৩২৪২৫
    ২৬২৭২৮২৯৩০৩১