জেলার নাম নোয়াখালী, শহরের নাম মাইজদী কোর্ট

Shuborno Provaat - সুবর্ণ প্রভাত

প্রত্যেক জেলার নামে রয়েছে জেলা শহর, কিন্তু ব্যতিক্রম নোয়াখালী জেলা। এ জেলা শহরের নাম মাইজদী কোর্ট, উপজেলা সদর হলেও থানার নাম সুধারাম। নোয়াখালীর নামে শহর না থাকলেও পৌরসভার নাম নোয়াখালী

নিজস্ব প্রতিবেদন : ১৯৪৮ সালে রাক্ষুসী মেঘনার অতলগর্ভে বিলীন হলো ঐতিহ্যবাহী নোয়াখালীর পুরনো শহর। যে শহর একসময় ছিল সৌন্দর্যের লীলাভূমি। কারুকার্যখচিত ও স্থাপত্যের নিদর্শনপূর্ণ অট্টালিকায় বসতো অফিস-আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শহরের দক্ষিণের ঘাটে ভিড়তো বিদেশী জাহাজ, লঞ্চ ও নৌযানগুলো। ঘৌড়দৌড়ের মাঠ, লং টেনিস গ্রাউন্ড ও টাউন ক্লাব ছিল চিত্তবিনোদনের প্রাণকেন্দ্র। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ব্যবসায়িক ঐতিহ্য বহনকারী সে শহর মেঘনা গিলে খেল। নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার এক বছর পর অস্তিত্বহীন এ শহর স্থানান্তর করা হয় মাইজদী মৌজায়। ডোবা-নালাপূর্ণ এ স্থানে মাটি ভরাট করে টিনের ঘর উঠিয়ে শুরু করা হয় অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক কাজকর্ম। ক্রমান্বয়ে এ মাইজদী মৌজার চেহারার অনেক পরিবর্তন ঘটে। গড়ে উঠে টিনের ছাউনি ঘেরা এক রাস্তার শহর। মৌজার নাম মাইজদী। তাই শহরের নাম হয়েছে মাইজদী। পরে অফিস-আদালত ঘিরে মাইজদীর শেষে কোর্ট শব্দটি যোগ হয়ে শহরের নাম হয়ে যায় মাইজদী কোর্ট। এ স্থানে স্থাপিত হয় মাইজদী কোর্ট রেলস্টেশন। রেলস্টেশনটির নাম মাইজদী কোর্ট হিসাবে ব্যাপক পরিচিতি ঘটে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে এ স্থানে অবকাঠামোগত ব্যপক উন্নয়ন সাধিত হয়। ১৬১১ সালের পর থেকে ভুলুয়া নামের পরিবর্তন ঘটে ‘নোয়াখালী’ নামে পরিচিতি লাভ করে। আজকের মাইজদী থেকে পুরাতন জেলা শহর ছিল প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। সে স্থানের পাশে এখন স্থাপিত হয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ঐ এলাকায় এখনো রয়েছে নোয়াখালী নামে একটি ইউনিয়ন। ব্রিটিশ আমলে নোয়াখালী শহর নামে রেজিস্ট্রেশনও রয়েছে। পুরাতন শহরের সাথে ট্রেন যোগাযোগ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুরাতন সে ট্রেন স্টেশনটির নাম ছিল সোনাপুর স্টেশন। এটি ছিল জেলার শেষ রেল স্টেশন। নদী ভাঙনের পর প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরত্বে স্থানান্তর করার পর তার নাম হয় নোয়াখালী স্টেশন। কিন্তু মানুষের মুখে মুখে তা সোনাপুর স্টেশন নামে এখনো পরিচিত হয়ে আসছে। জেলা শহর মাইজদীর দোকানপাটগুলোর সাইনবোর্ডগুলোতে নোয়াখালী শহর না লিখে মাইজদী কোর্ট নাম লেখা হচ্ছে। বিভিন্ন রুটে যাতায়াতকারী যানবাহনগুলোর অবস্থাও অনুরূপ। ঢাকা-নোয়াখালী, নোয়াখালী-ঢাকাগামী আন্তঃজেলা ও অভ্যন্তরীণ বাস এবং বিভিন্ন যানে লেখা আছে ঢাকা-মাইজদী-সোনাপুর। সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং এলজিইডির রাস্তায় মাইলফলকগুলোরও একই অবস্থা। কোথাও নোয়াখালী শহরের নাম লেখা নেই। এভাবে হারিযে যায় নোয়াখালী শহরের নাম। তবে জেলা প্রশাসক, জেলা জজ, জেলা পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়ে ও অফিস-আদালতে নোয়াখালী শব্দটি লেখা রয়েছে। জেলা শহরে যে উপজেলা তার নাম উপজেলা সদর। প্রত্যেক জেলা সদরের থানার নাম সদর থানা। উপজেলা সদর হলেও এ জেলা শহরের থানার নাম সুধারাম। মাইজদী শহর, সদর উপজেলা ও সুধারাম থানার একাংশ নিয়ে নোয়াখালী পৌরসভা স্থাপিত হয়েছে। মাইজদী ও সুধারাম থানা জেলা শহরের নামের সাথে কোনো মিল নেই। ভিন্ন শহর থেকে অজানা-অচেনা মানুষ, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী এ নোয়াখালী শহর খুঁজে নিতে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে, এখনো এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। প্রায় ৬৯ বছর পূর্বে হারিয়ে যাওয়া এ শহরের নামের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে এ জেলার কেউ এগিয়ে আসেনি। এ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া শহরের নাম পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হন এক সময় নোয়াখালীর সাবেক ডিসি মোস্তফা কামাল হায়দার। তিনি ২০০৪ সালে এ বিষয় বাস্তবায়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গুণীজন ও সুধীজনদের সাথে কথা বলেন এবং একটি পুস্তিকাও প্রকাশ করেন। তিনি অন্যত্র বদলী হলে তার সে প্রচেষ্টার এক পর্যায়ে থেমে যায়। জেলার বিশিষ্টজনরা মনে করেন জেলার ঐতিহ্য জেলা শহরের হারানো নাম পুনরুদ্ধারে এ জেলার জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, পৌর মেয়র ও দোকান মালিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শহরের দোকানপাট ও যানবাহনগুলোর উপর পৌরসভার কর্তৃত্ব বেশি। পৌরসভা ও জনপ্রতিনিধি প্রশাসন যৌথভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করলে এ জেলার হারানো শহরের নাম পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে পৌর মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেল বলেন, শহরের নাম ‘নোয়াখালী’ বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। হারানো এ শহরের নাম পুনরুদ্ধারের জন্য সবাইকে নিয়ে তার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন। নোয়াখালী পৌর বণিক সমিতির সভাপতি সায়েফ উদ্দিন সোহান এ ব্যপারে সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলে জানান। জেলাবাসীর প্রত্যাশা ভিন্ন জেলার লোকজনকে এসে যেন ‘নোয়াখালী শহর’ খুঁজতে না হয়।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

    রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫
    ১৬১৭১৮১৯২০২১২২
    ২৩২৪২৫২৬২৭২৮