দেশের শিক্ষাঙ্গনে আলো ছড়ালেন যারা

Shuborno Provaat - সুবর্ণ প্রভাত
এমদাদ হোসেন কৈশোর

এমদাদ হোসেন কৈশোর : নোয়াখালীর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও আদর্শবান শিক্ষকরা শুধু এ জেলায় নয়; বরং সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে খ্যাতি অর্জন করে তারা শুধু নিজেরাই খ্যাতিমান হননি, জেলাকেও করেছেন গৌরবান্বিত। জেলার যেসব কৃতি শিক্ষাবিদ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে অনন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের মধ্যেÑ স্যার আহাম্মেদ ফজলুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। তার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এফ রহমান হল নামকরণ করা হয়। ড. ফজলে হোসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ড. আবদুল মতিন চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ড. মুজাফফর আহম্মেদ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ড. এ এন এম মমতাজ উদ্দিন চৌধুরী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন, ড. মাজহারুল হক একজন বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ হিসাবে তৎকালীন পাকিস্তানের অর্থনীতি পরিষদের চেয়াম্যান এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ অর্থনীতি পরিষদের প্রথম চেয়াম্যান নিযুক্ত হন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের লেকচারার পরবর্তীতে অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ছাড়াও ফজলুল হক মুসলিম হল এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট ছিলেন। বেগম শামছুন্নাহার মাহমুদ কলকাতার লেডি বেব্রোন কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। বেগম রোকেয়ার মৃত্যুর পর তিনিই নারীমুক্তি আন্দোলনে আমৃত্যু নিয়োজিত ছিলেন। তার সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামছুন্নাহার হলের নামকরণ করা হয়। ড. খলিলুর রহমান কুমিল্লা ফয়েজুন্নেছা কলেজ, রাজশাহী কলেজ, চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ ও সিলেট কমার্স কলেজে অধ্যাপনা করেন। কৃষি অর্থনীতিতে তার অসাধারণ পাণ্ডিত্যের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ড. রহমানকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব প্রদান করা সত্ত্বেও তিনি নিজ দেশে চলে আসেন। অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপক নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঘাতক আলবদর বাহিনীর হাতে শহীদ হন। তার সহোদর ভাই অধ্যাপক কবীর চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময় ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করেন, পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জাতীয় অধ্যাপক পদে ভূষিত হন। অধ্যাপক কবীর চৌধুরী ব্রজমোহন কলেজ এবং ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে লেকচারার পদে যোগদান করে। পরবর্তীতে রিডার পদে উন্নীত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে আলবদর বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। ড. হাবিবুর রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রধান ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে শহীদ হন। ড. আবুল কালাম চৌধুরী (এ কে আজাদ চৌধুরী) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)’র সাবেক চেয়ারম্যান। নয়াদিল্লিভিত্তিক সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির গভর্নিংবডির চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক (২৩তম) উপাচার্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম লীর সদস্য। অধ্যাপক সামছুল আলম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ট্রেজারার, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, আনোয়ার উল্যা চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, অধ্যাপক শহীদ উদ্দিন আহাম্মেদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি, কাজী সালাউদ্দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ড. আফতাব আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রফেসর ড. মাহবুব উল্যাহ্ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নিয়োজিত হন, পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি পদে নিয়োজিত হন, ড. আবুল হাসেম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার, ড. এম মফিজ উল্যা কবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি, ড. মহাব্বত আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্য এবং ফজলুল হক হলের প্রভোস্ট ছিলেন।
দেলোয়ার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক, ড. আবু বকর সিদ্দিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামি শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক, ড. লুৎফল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ও ইসলামি শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। ড. হাবিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান, ড. আবুল কালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যাপক, ড. সামছুল আলম ইসলামী ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েটে) এ কে এম আবদুল কাদের সহকারী অধ্যাপক ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে এটিএম সামসুজ্জোহা ছিলেন। কফিল উদ্দিন মাহমুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলী আহমদ বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির চেয়ারম্যান রসায়নবিদ প্রফেসর আবুল খায়ের নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে প্রফেসর এ কে এম ছায়েদুল হক চৌধুরী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। ড. শরীফ উল্লা ভূঁইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ছিলেন।
নোয়াখালী জেলায় সর্বপ্রথম ১৯৪২ সালে চৌমুহনী কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় এতে গোবিন্দ চন্দ্র রায় অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন। প্রফেসর তফাজ্জল হোসেন (টি হোসেন) পরবর্তীতে এ কলেজের অধ্যক্ষ পদে দীর্ঘদিন নিযুক্ত থেকে নোয়াখালী জেলার শিক্ষা বিস্তারে অনন্য অবদান রাখেন। যা নোয়াখালীতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ১৯৬৩ সালে নোয়াখালী সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠাকালে এ কে মোহম্মদ উল্যা অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন, তিনি পরবর্তীতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, চট্টগ্রাম হাজী মহসিন কলেজে অধ্যক্ষ এবং যশোর শিক্ষা বোর্ড ও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়ে গৌরবোজ্জল ভূমিকা পালন করেন। নোয়াখালী সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রূপান্তর করে আজো স্মরণীয় হয়ে আছেন এ কলেজের দীর্ঘদিনের অধ্যক্ষ আবদুল জলিল। এ কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োজিত হন অধ্যাপক কাজী মোঃ রফিক উল্যাহ, প্রফেসর আতাউর রহমান, অধ্যাপক নুরুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক শাহ আলম। বর্তমানে এ কলেজে প্রফেসর আল হেলাল মোশারফ অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এডভোকেট আনোয়ার হোসেন নোয়াখালী মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার পর অধ্যক্ষ পদে নিয়োজিত থেকে অনন্য ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তী এ প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ করা হলে এতে প্রফেসর মুহাম্মদ আমানত উল্যাহ্, প্রফেসর মোদাচ্ছেরুল হক অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেন। নোয়াখালী পাবলিক কলেজ অধ্যক্ষ আশ্রাফুল করিম এডভোকেট এবং নোয়াখালী আইন কলেজ অধ্যক্ষ মরহুম ফিরোজ-উল হক চৌধুরী এডভোকেট প্রতিষ্ঠা করেন। অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান নোয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও পরবর্তীতে তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার নিযুক্ত হন। নোয়াখালী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও কবিরহাট সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মমিনুল হক বর্তমানে নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। নোয়াখালী পৌরসভার সোনাপুর কলেজে অধ্যক্ষ মরহুম ছালেহ্ আহমেদ, চরমটুয়া কলেজে অধ্যক্ষ ফারুক হোসেন, হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরহুম ছিদ্দিকুর রহমান এবং চৌমুহনী মদনমোহন উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মরহুম ছালেহ্ আহমেদ, বেগমগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মরহুম সুলতান মাহমুদ, চাটখিলের সপ্তগাঁও আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনছারী শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় উমা রানী দেবী ১৯৩৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক পদে মিসেস প্রীতি বোস অনন্য অবদান রাখেন। এছাড়াও জেলার আরো অনেক খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ রয়েছেন, যাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষার আলো ছড়ানো শিক্ষাবিদরা আমাদের সোনালী অতীত ও বর্তমানকে যেমন গৌরবান্বিত করেছেন, তেমনি স্মরণীয় হয়ে আছেন সারাদেশে।
লেখক : আইনজীবী ও সংস্কৃতিকর্মী

শেয়ার করুনঃ

1,445 thoughts on “দেশের শিক্ষাঙ্গনে আলো ছড়ালেন যারা”

  1. These antibodies can identify substances on cancer cells or normal substances that may help cancer cells grow.
    your needed drugs through a site specializing in discounted side effects of prednisone in humans . Should I stop taking it?
    Checklist: Cleaning the Air in Your Home Recent Articles Everything You Need to Know about Indoor Air Quality HEPA Air Purifiers Improve Air Quality Indoor Air Quality and Your Home NEED HELP?