নোবিপ্রবিতে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিনিধি

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট ) বিকাল ৩ টায় এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, এম. পি। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে সংযুক্ত হন বরিশাল বিশ্বাবদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মোঃ দিদার-উল-আলম। সভায় মূখ্য আলোচক ছিলেন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মেজবাহ্ উদ্দিন আহমেদ (মেজবাহ্ কামাল)। স্বাগত বক্তব্যে নোবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ ও জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন।

প্রধান অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী তার বক্তব্যে শুরুতে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। একই সঙ্গে ৭৫ এর ১৫ আগস্টের কাল রাত্রীতে যাঁরা শহীদ হয়েছেন এবং ৩ নভেম্বর শহিদ জাতীয় চার নেতার প্রতি তিনি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু না থাকলে এ দেশ সৃষ্টি হত না। জাতির পিতার যে রাষ্ট্র দর্শন ছিল সেটা নিয়ে আমাদের গবেষণা এবং অধ্যাবসায়ের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণে রাষ্ট্রের ভীতগুলো খুব অল্প সময়ে বঙ্গবন্ধু বপন করে গিয়েছিলেন। হত্যাকারীরা চেয়েছিল আমরা একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিনত হই, কিন্তু আমরা তা হইনি। যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেছেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ রক্ষার লড়াই করেছেন তাদের জন্যই আমরা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিনত হইনি। রাষ্ট্রের প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর যে দূরদর্শিতা তাতেই এ দেশের ভীত রচিত হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে প্রথম বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দেয়। আমরা বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ একে অপরের মধ্যে নিহিত। আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সম্মান দেখিয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হই তাহলেই এদেশ হবে ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত ও অসম্প্রদায়িক সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ”।

অনুষ্ঠানের মূখ্য আলোচক প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মেজবাহ্ উদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যের শুরুতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিত বাঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৫ আগস্টের কালো রত্রিতে নিহত সকল শহিদ ও ৩ নভেম্বর জেল হত্যাকান্ডের নিহত জাতীয় চার নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন ১৫ আগস্ট এবং ৩রা নভেম্বর একই সূত্রে গাথা। তারা চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যারা হাল ধরতে পারতেন তাদের সবাইকে শেষ করতে পারলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুছে ফেলা যাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ নতুন প্রজন্মকে এ আয়োজনে যুক্ত হবার জন্য অভিনন্দন জানান তিনি। তিনি আরো বলেন বঙ্গবন্ধু একজন বিশ্বমানের নেতা ছিলেন, কারণ তিনি যথা সময়ে যথাযোগ্য কর্মসূচি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারতেন। তিনি তার ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন। কার কি দায়িত্ব সবই তিনি বলে গিয়েছিলেন। ইতিহাসের সেই মহেন্দ্রক্ষণে ২৬ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। বাংলাদেশের জন্মের সাথে আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি ইতিহাসের সেই মহা নায়ক যিনি দেশের মানুষকে ধাপে ধাপে তৈরি করে স্বাধীনতার দিকে ধাবিত করেছেন। ৭ই মার্চের ভাষণটির মত এত প্রভাব সৃষ্টিকারী ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই। যে ভাষণ গোটা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। এটি আমাদের নিত্য অনুপ্রেরণার উৎস। একই সঙ্গে ১০ জানুয়ারি তিনি ফিরে এসে যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানেও কেমন ভবিষ্যতের বাংলাদেশ তার রূপরেখা ছিল। কেমন স্বপ্নের দেশ তিনি নির্মাণ করতে চান তার সবই ছিল সেই ভাষণে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড তাদেরই কাজ যারা ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্বাস করে না। দেশের ভেতর লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানি এজেন্টরা ও সাম্প্রদায়িক শক্তি ইতিহাসের এ জঘন্যতম হত্যাকান্ড ঘটায়। বঙ্গবন্ধু তার দীর্ঘ কারা জীবনে জীবনকে বাজি রাখতে পিছপা হননি, মৃত্যুকে জয় করা এ অকুতোভয় বীর পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। হিমালয় সদৃশ এ মহান নেতাকে আমাদের জানতে হবে বুঝতে হবে। সবশেষে সফল আয়োজনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি”।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বরিশাল বিশ্বাবদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তার আদর্শকে হত্যা করা যায়নি। সা¤্রাজ্যবাদী, মৌলবাদী এবং এদেশীয় স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্রান্তে ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়। তরুণ প্রজন্ম যদি বঙ্গবন্ধুকে সঠিকভাবে জানতে পারে তবে তাদের মধ্যে দেশ প্রেম তৈরি হবে”।

 

অনুষ্ঠানের সভাপতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মোঃ দিদার-উল-আলম তার বক্তব্যের শুরুতে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংরাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বাঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি আরও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টের সকল শহিদদের। উপাচার্য বলেন, আগস্ট শোকের মাস, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংগঠিত হয়েছিল বাঙ্গালির ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মস্পর্শী ও ঘৃনিত ঘটনা। হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙ্গালি কখনও স্বাধীন ও সার্বভৌম ছিল না। বঙ্গবন্ধুর মধ্যে বাঙ্গালি তার কাঙ্খিত নেতার সন্ধান পায়। তার সর্বাধিনায়কত্বে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাধ্যমে বাঙ্গালি প্রথম বারের মত একটি আধুনিক জাতি রাষ্ট্র সৃজন করে। এরপর রাষ্ট্র হিসেবে সমৃদ্ধি ও প্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়ার এক শুভ যাত্রার সূচনা হয়েছিল। ১৯৭১-১৯৭৫ সাল ছিল বাঙ্গালি জাতি রাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে শুভ স্বপ্নময় ক্ষণ। কারণ তখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন বাঙ্গালির সবচেয়ে নির্ভরতার মানুষটি। আমাদের দূর্ভাগ্য জাতির শ্রেষ্টতম কান্ডারিকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। আগস্ট মাস এলেই সেই দুঃসহ স্মৃতি আমাদের তীব্রভাবে তাড়িত করে। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের বিকাশ পর্বে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হারানোর যে অভিঘাত, তা আমরা আজও বয়ে বেড়াচ্ছি। এ আক্ষেপ কখনও শেষ হবার নয়। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু মানবিক ও সৃজনীশক্তি সম্পন্ন একটি আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছিলেন। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও নৈতিক গুণাবলি সমৃদ্ধ উদ্ভাবনী শক্তি সম্পন্ন দক্ষ ও দেশ প্রেমিক মানব সম্পদ গড়ে তোলার অঙ্গীকার বদ্ধ। এ জন্য আমরা নানা মুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি। পরিশেষে বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্ট শাহাদাত বরণকারী শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপাচার্য”।

নোবিপ্রবির নব-নিযুক্ত প্রো- ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী বলেন, সমুদ্রের তল পরিমাপ করা যায় কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের যে গভীরতা তা পরিমাপ করা যায়না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে যদি আমরা ধারণ করতে পারি, তাহলেই আমরা সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পারবো। অনুষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ঠ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

স্বাগত বক্তব্যে নোবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ ও জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন বলেন “শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি ১৫ আগস্টে নিহত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহিদদের। প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা যেভাবে দেশের উন্নয়ন করে চলেছেন, সেই একই উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে নোবিপ্রবিতে। তিনি বলেন প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ষড়যন্ত্র এখনও চলমান। এসব থেকে নতুন প্রজন্মকে সতর্ক থাকতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশ এগিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে”।

নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর তার বক্তব্যে বলেন, ‘প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জাতির পিতার চেতনা চির সমুজ্জল থাকবে। জাতির পিতার কন্যার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল।’ এখনও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দ্রুত দেশে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং ১৫ আগস্ট নিহত সকল শহিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন তিনি।

নোবিপ্রবির শিক্ষক জনাব বিপ্লব মল্লিক ও সাদিকা পারভিন তামান্নার সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজনুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন, অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন। ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদসমূহের ডিন, ইনস্টিটিউটসমূহের পরিচালক, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, হলসমূহের প্রভোস্ট, দপ্তরসমূহের পরিচালক, শিক্ষক সমিতি ও অফিসার্স এসোসিয়েশনের নেতা,সাংবাদিকসহ ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেয়। এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের শাখা কর্মকর্তা রায়হান কায়সার হাশেম এ সভা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছেন।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

    রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
    ১০১১১২১৩১৪
    ১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
    ২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
    ২৯৩০৩১