নোবিপ্রবিতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠিত

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃনোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত স্নাতক প্রথম বর্ষের (সম্মান) শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। নোবিপ্রবি ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগ এর আয়োজন করে। এদিন সকাল ও বিকেল দুই পর্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল।
আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) বিজয়া সেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত ও দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন করা হয়। এরপর নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন অতিথিবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল শুরুতেই নবীন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে নিহতের রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। এসময় তিনি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের এ বিশ্ব হলো বর্তমানে অবাধ স্বাধীনতার সময় ভোগের। কিন্তু এর সাফল্য নির্ভর করবে তোমাদের ওপর, তোমরা মুক্ত পরিবেশ পেয়েও অধ্যাবসায়ী হবে, পরিশ্রমী হবে- যা তোমাদের ভাবিষ্যত গড়ে দেবে। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল ক্লাব সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেকে সম্মৃদ্ধ করবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় একটা মুক্ত ক্যাম্পাস। আমরা ভয় থেকে, অন্যায় থেকে মুক্ত একটা ক্যাম্পাস তৈরি করতে চাই। তিনি আরো বলেন, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীরাই হলে আসন বরাদ্দ পাবে। এসময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে এক্ষেত্রে নোয়াখালীবাসীর সহযোগিতা চান।শিক্ষার্থীরা নোয়াখালীর মেহমান, তাই এ অঞ্চলের সকলের উচিত ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতা করা।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল আরও বলেন, আমাদের চেষ্টা হলো নোবিপ্রবিকে বিশ্বমানের সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলা, র‌্যাঙ্কিংয়ে ৫০০ এর মধ্যে নিয়ে আসা। এ কাজে নোবিপ্রবি পরিবারের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সহযোগিতা চান তিনি। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শিক্ষার মূল ভিত্তি হলো নিজের সুকুমার বৃত্তি জাগ্রত করা। বড় পদে চাকরি করলে মানুষ বড় হয় না। মানবিক মানুষ হলো সে মানুষ যে ন্যায় অন্যায়ের ফারাক করতে জানে। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের মানবিক মানুষ হওয়ার আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ১৮-২০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রতিবছর টারশিয়ারি তথা উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে আসতে পারে। তোমরা সেসব ভাগ্যবানদের একজন, তোমাদের মা-বাবারাও সফলকাম। ছাত্রজীবনে সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে, সময়ের সদ্ব্যবহার যে করবে সে ভবিষ্যত গড়ে নেবে। তোমাদের মাঝে অনেকে আজ নোবিপ্রবিতে ভর্তি হতে পারেনি।
তিনি আরো বলেন, সারাবিশ্ব তোমাদের জ্ঞানচর্চার জন্য উম্মুক্ত। জ্ঞানচর্চা করা আর সুনাগরিক হওয়া এক বিষয় নয়। সর্বাগ্রে তোমাদের প্রত্যেককে সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে হবে। আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, কিন্ত সমান্তরালি মনোজগতের পরিবর্তন কতটা করতে পেরেছি সেটা তোমরা একটু ভাবলেই বুঝতে পারবে। কাজেই কোনোকিছুতেই তোমরা যেনো পিছিয়ে না পড়ো সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। কোনো শিক্ষার্থীকে যাতে করে আর্থিক কারণে মাঝপথে উচ্চশিক্ষার পথ থেকে বিচ্যুত হতে না হয়, সেদিকে আমরা সচেষ্ট থাকবো। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন সকল সহযোগিতা করার আশ্বাস দিচ্ছে।
এসসময় ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) বিজয়া সেন বলেন, নবাগত ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ সবাইকে অভিনন্দন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলবো, সংবাদপত্রের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেইসবুক এখন বেশ জনপ্রিয়, কিন্তু এই মাধ্যম থেকে যাচাই না করে কোন তথ্যকে গ্রহণ করবো না। অর্থাৎ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এই মাধ্যমগুলো আমাদের ব্যবহার করতে হবে। আরেকটি কথা মানুষ হিসেবে সবাইকে আমরা সমান চোখে দেখবো, বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষদের সাথে আমরা কখনোই খারাপ আচরণ করবো না। শালীনতার সাথে চলাফেরা করবো এবং ইভটিজিংকে না বলবো। আচরণ এবং ভালো মন্দ বিচারের ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে অনেক যত্নশীল হতে হবে। শুধু সার্টিফিকেট অর্জন নয়, আমাদের সত্যিকারের মানুষ হতে হবে। সবাইকে ধন্যবাদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা রাখেন নোবিপ্রবি আইআইএস এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আতিকুর রহমান ভূঞা। প্রক্টর জনাব এ. এফ. এম আরিফুর রহমান, হযরত বিবি খাদিজা হলের প্রভোস্ট ড. মো. মামুন অর রশিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক উকিল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর সরকার ও আইন বিভাগের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) জনাব মো. জামসেদুল ইসলাম।
দ্বিতীয় পর্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন ড. মোহাম্মদ জিয়াউল হক, সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আসাদুন নবী, ভাষা শহীদ আবদুস সালাম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ মুরাদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট ড. আবিদুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইসতিয়াক জামিল। নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইন বিভাগের নাঈম ইমরান, বিজিই বিভাগের এলভি রায়, ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থী মারজাহান সুলতানা তাকওয়া, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সিফাত, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের মাহমুদা আক্তার, শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের হাসনাত হাফসিয়া, এসিসিই বিভাগের তানজিলুর রহমান এবং বাংলা বিভাগের মইনুল ইসলাম।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমআইএস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. বনি ইয়ামিন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জান্নতুল ফেরদৌস ও রসায়ন বিভাগের শেইখ মোহাম্মদ ইউসুফ, এমআইএস বিভাগের রামিশা নওশিন ও ফিম্স বিভাগের ফারুক হাসান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নোবিপ্রবির বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, হলের প্রভোস্টবৃন্দ, প্রক্টরসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিবৃন্দ বিভিন্ন ক্লাবের স্টলসমূহ ঘুরে দেখেন ও গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের সহকারী পরিচালক (তথ্য ও জনসংযোগ) ইফতেখার হোসাইন।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

    রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
    ১০১১১২১৩১৪
    ১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
    ২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
    ২৯৩০৩১