নোবিপ্রবির উপাচার্যের বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর ও সাধারন সম্পাদক মোঃ মজনুর রহমান এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন,
“নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ দিদার-উল-আলম যোগদান হতে আজ অবধি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশের উচ্চ শিক্ষার উন্নয়নে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নোবিপ্রবির শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনে দক্ষতা ও সততার সাথে সকলকে নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
প্রফেসর ড. মোঃ দিদার-উল-আলম যোগদানের পর থেকেই শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে বিশৃঙ্খল পরিবেশ দূর হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রয়েছে। এছাড়া করোনাকালীন দুর্যোগের সময় যে পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করোনা শনাক্তকরণের জন্য ভূমিকা পালন করছে তার মধ্যে নোবিপ্রবি অন্যতম যা ইতোমধ্যে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ল্যাব স্থাপন ও করোনা পরীক্ষার অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। করোনাকালীন জাতীয় দুর্যোগের মধ্যেও তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে ও নোবিপ্রবির শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় জানুয়ারি-জুন সেমিস্টারের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে সমাপ্ত হয়ে পরবর্তী সেমিস্টারের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে সকল বিভাগের সকল বর্ষের ফলাফল প্রকাশ করা হয় এবং অনলাইনে স্থগিত ও নতুন সেমিস্টারের পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয় যা দুর্যোগকালীন শিক্ষা ব্যবস্থাপনার এক অনন্য উদাহরণ।
তিনি যোগদানের পূর্বেই গত ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নোবিপ্রবিতে সবধরণের নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে অচলাবস্থা ও স্থবিরতা দেখা দেয়। বর্তমান উপাচার্য মহোদয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে খুব দ্রুতই আপগ্রেডেশন ও পদোন্নতির উপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা শিথিল করে শিক্ষকদের আপগ্রেডেশন ও পদোন্নতির ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের নতুন নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। পরবর্তী সময়ে গত ফেব্রুয়ারি ২০২১ এ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনিয়মের অভিযোগে গঠিত ইউজিসির তদন্ত দল নোবিপ্রবিতে সরেজমিনে তদন্তে আসেন। তাঁদের তদন্ত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে গত ১৯ মে ২০২১ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিছু সুপারিশসহ নোবিপ্রবির উপর আরোপিত নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি এর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, মাননীয় উপমন্ত্রী, সচিব ও ইউজিসি সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছে।
গত ২৬ জুলাই ২০২১ তারিখে কিছু প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় মাননীয় উপাচার্যের বাড়ি ভাড়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার সংশ্লিষ্ট প্রকাশিত সংবাদ শিরোনামগুলো আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। যাতে বেশ কিছু তথ্য মিথ্যা, বানোয়াট, কল্পনাপ্রসূত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আমাদের মনে হয়েছে। কিছুক্ষেত্রে তথ্য বিভ্রাটও রয়েছে যা জাতির সামনে আমাদের তুলে ধরা প্রয়োজন বলে মনে করছি।
আমাদের জানা তথ্য মতে, মাননীয় উপাচার্য মহোদয় নোবিপ্রবিতে যোগদানের পরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনে তাঁর পরিবার অবস্থান করতেন এবং উপাচার্য হিসেবে তিনি ভিসি বাংলোতে না উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজে অবস্থান করতেন। উপাচার্য নিজে কোন বাড়ি ভাড়া উত্তোলন করেন নি। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২০১৯-২০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত নিয়মে নোবিপ্রবি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকা হারে বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করেন। ২০২০ সালের জুন মাসে এলপিআর পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাসিক ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা হারে বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করায় নোবিপ্রবির অর্থ সাশ্রয়ের জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনের বাসাটি ছেড়ে পূর্বের বাজেটের মধ্যে একটি বাড়ি ভাড়া নেন এবং ২০২০-২১ পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া বাবদ নোবিপ্রবি থেকে সংশ্লিষ্ট মালিককে ভাড়া পরিশোধ করা হয়।
পরবর্তীকালে ২০২০ সালে মে মাসে নোবিপ্রবিতে কোভিড-১৯ পরীক্ষা ল্যাব চালু হওয়ার পর করোনা ল্যাব সংশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ গেস্ট হাউজে অবস্থান করার প্রেক্ষিতে উপাচার্য মহোদয় তাঁর বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় গেস্ট হাউজে থেকে ভিসি বাংলোর একটি কক্ষে অবস্থান করেছিলেন (রিজেন্ট বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে নির্দিষ্ট হারে ভাড়া প্রদান করে) এবং দায়িত্ব পালন অবস্থায় ২০২১ সালের মার্চ মাসে কোভিড পজেটিভ হয়ে বিএসএমএমইউতে দুই মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন। আরো উল্লেখ্য যে, সংবাদ মাধ্যমগুলোতে নিয়োগ সংক্রান্ত যে তথ্য উত্থাপন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, কল্পনাপ্রসূত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাস্তবে উপাচার্য মহোদয় যোগদানের পর থেকে অদ্যাবধি কোন ধরনের নতুন নিয়োগ প্রদান করেননি।
সম্প্রতি ইউজিসি কর্তৃক প্রেরিত যে চিঠির বরাত দিয়ে প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা শিক্ষক সমিতির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের জানা মতে, গত নভেম্বর ২০২০ সালে ইউজিসি হতে আগত বাজেট পরীক্ষক দল প্রতি বছরের ন্যায় বিভিন্ন বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ জানিয়ে রিপোর্ট প্রদান করে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উক্ত পর্যবেক্ষণগুলোর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। করোনাকালীন এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ হতে উক্ত পয়েন্টগুলোর ব্যাখ্যা প্রদান করতে কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দিষ্ট সময় শেষে অবহিত হয়নি জানিয়ে ইউজিসি হতে শুধুমাত্র উপাচার্যের বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত পয়েন্টে একটি পৃথক পত্র উপাচার্য বরাবর পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আগত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী উপাচার্যের বাড়ি ভাড়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকাস্থ গেস্ট হাউজের গাড়ির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে ব্যাখ্যা চাওয়া হয় যা যথাসময়ের মাঝে উপাচার্য মহোদয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিলেন। তারপরও ইউজিসি উক্ত বিষয়ে অবহিত নয় জানিয়ে পত্র প্রেরণ দুঃখজনক।
সর্বোপরি শিক্ষক সমিতি মনে করে, উপাচার্য মহোদয়ের বাড়ি ভাড়া ও ঢাকাস্থ গেস্ট হাউজের গাড়ির বিষয়ে মাননীয় উপাচার্য ইউজিসির সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে আইন অনুযায়ী বিষয়টির দ্রুত সুরাহা করবে।”