নোয়াখালীতে ভোজ্য তেল-পেঁয়াজ-সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী

নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের সংসার চালাতে ত্রাহি অবস্থা

মো. আসাদুল্যাহ মিলটন : জেলা শহরের বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মৌসুমি সবজি, ব্রয়লার, লেয়ার ও কক জাতের সোনালি মুরগির দাম ঊর্ধ্বমুখী। গত এক মাস ধরে বেড়েই চলেছে মুরগির দাম। গত সপ্তাহ থেকে এ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে পেঁয়াজ। ভোজ্য তেলের দামও চড়া। এছাড়াও ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো ধরনের সবজিই বাজারে নেই।

এদিকে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার খবরে জানা যায়, সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে মোটা চালের দাম বাড়ার কথাও জানিয়েছে।

এমতবস্থায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষরা। সংসার চালাতে গিয়ে তাদের অবস্থা ত্রাহি। বাজারের তালিকা বারবার কাটছাঁট করেও সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে তাদের।

আজ শনিবার সকালে জেলা শহরের মাইজদী পৌর বাজার ও সোনাপুর পৌর বাজারে গিয়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার এ চিত্র পাওয়া যায়। গত এক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁয়াজ ও ব্রয়লার মুরগির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজে মানভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। অথচ গত সপ্তাহে তা যথাক্রমে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা ও ৪০ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়।

কিন্তু হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে কেন? এ তথ্য খুঁজতে গিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে অতিবৃষ্টির ফলে পেঁয়াজের উৎপাদন কম হয়েছে। সে কারণে ভারতের ব্যবসায়ীরা বুকিং রেট বাড়িয়েছে। আর যেসব পেঁয়াজ ভারত রপ্তানি করছে সেগুলো অপরিপক্ক হওয়ায় রাস্তায় বেশির ভাগ পঁচে যাচ্ছে। এছাড়া সামনেই দুর্গাপূজা। তখন ছুটির সময় ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ রাস্তায় আটকে যেতে পারে। এ কারণে লোকসানের আশঙ্কায় এ দেশের ব্যবসায়ীরা আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। তবে পূজা শেষে পেঁয়াজের দাম আবার কমে আসবে বলে আশা করছে আমদানি সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে নোয়াখালী জেলার খেটে খাওয়া মানুষগুলো মাংস বলতে যে ব্রয়লার মুরগিকেই জানতো তারও দাম গত এক মাস ধরেই চড়া। গত এক মাসে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৩২ শতাংশের বেশি। গতকাল শুক্রবার বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয় ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। আর গত বছর এই সময় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১১৫ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে। কক জাতের সোনালি মুরগিও এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়। মুরগির পাশাপাশি ডিমের দামও বাড়তি। আজ বাজারে প্রতি হালি লাল ডিম বিক্রি হয়েছে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায়। যা একমাস আগেও ছিল ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা।

পোলট্রি ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে পোলট্রি খাদ্যের দাম বাড়ার কারণেই নাকি মুরগির এ ঊর্ধ্বগতি। এছাড়া করোনার সময় চাহিদা কমে গিয়ে লোকসান হওয়ায় এখন চড়া দামে বিক্রি করে সেই লোকসান কমাতে নাকি দাম বাড়ার আরেকটি কারণ।

ভোজ্য তেলের দামও স্বল্প আয়ের মানুষদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দর বেঁধে দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না ভোজ্য তেলের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলে ১০ টাকা বেড়ে ৬৮০ থেকে ৭৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর সুপার পামঅয়েলে লিটারে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২৮ থেকে ১৩৫ টাকায়। তবে এক লিটারের বোতলজাত ও খুচরা সয়াবিনের দাম বাড়েনি। বর্তমানে খুচরা বাজারে এক লিটারের বোতজাত সয়াবিন ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।

অপরদিকে বেড়েছে গরিবের মোটা চালের দামও। কেজিতে ২ টাকা বেড়ে আজ বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৭ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। তবে সরু ও মাঝারি মানের চালের দাম তেমন বাড়েনি। বর্তমানে বাজারে সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেট মানভেদে ৫৮ থেকে ৬৬ টাকা ও মাঝারি মানের চাল পাইজাম ও লতা ৫০ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তের শাক-সবজি। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে শিম ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, টম্যাটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, গাজর ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এছাড়া বাজারে আসা শীতকালীন আগাম সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি (ছোট ছোট) ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এছাড়া কাঁচা মরিচের ঝালও বেড়েছে। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয় ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।

সোনাপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা সোহেল বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে অনেক সবজি ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় দাম বেড়েছে। তবে শীতকালীন আগাম সবজি পুরোপুরি ওঠা শুরু করলে দাম কমে আসবে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

    রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
     
    ১০১১
    ১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
    ১৯২০২১২২২৩২৪২৫
    ২৬২৭২৮২৯৩০৩১