নোয়াখালীর চাঞ্চল্যকর নারী ধর্ষণ মামলায় দেলোয়ার ও কালামের যাবজ্জীবন

নিজস্ব প্রতিনিধি : নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃঞ্চপুর গ্রামে বিবস্ত্র করা সেই নারীকে (৩৭) ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার দুই আসামি দেলোয়ার বাহিনীপ্রধান দেলোয়ার হোসেন দেলু ও তার প্রধান সহযোগী মোহাম্মদ আলী ওরফে আবুল কালামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সাথে আদালত আসামিদেরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন। আজ সোমবার সকাল ১১টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক জয়নাল আবেদীন আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় প্রদান করেন।

পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ লাবলু বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আলোচিত গৃহবধূ ধর্ষণ মামলায় আমরা বিজ্ঞ আদালতে স্বাক্ষীর সাক্ষ্যপ্রদান, জেরা ও জবানবন্দী সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ১২ জন ও আসামি পক্ষে ৩ জন সাফাই স্বাক্ষী দেন। রাষ্ট্র পক্ষে অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ লাবলু এবং বাদী পক্ষে অ্যাডভোকেট মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন ও আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বাদল মামলা পরিচালনা করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, দুই দফায় ধর্ষণের অভিযোগে ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর বেগমগঞ্জ থানায় দেলোয়ার ও কালামকে আসামি করে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন ওই নির্যাতিতা নারী। পরে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে পিবিআই গত বছরের ১৫ ডিসেন্বর এই দুই আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। পরবর্তীতে এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি আদালত দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। গত প্রায় ৭ মাসে সাক্ষ্যগ্রহণ, শুনানি ও যুক্তিতর্ক শেষে আদালত আজ এ রায় প্রদান করেন।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বরে বেগমগঞ্জের একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা ওই নারীর স্বামীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হয়ে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে এবং মোবাইল ফোনে ভিডিওচিত্র ধারণ করে তারা। নির্যাতিতা ওই নারী জেলা শহর মাইজদীতে তার বোনের বাসায় পালিয়ে এসে চিকিৎসা নেন। এ অবস্থায় অভিযুক্তরা তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে, তা নাহলে তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। এতে ওই নারী রাজি না হওয়ায় আগের ধারণকৃত সেই ভিডিও ৪ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এ ঘটনার পর ওই নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ও পর্ণোগ্রাফি আইনে দুটি মামলা করেন নির্যাতিতা নারী।
বিবস্ত্র করে নির্যাতনের আগে দেলোয়ার বাহিনীপ্রধান দেলোয়ার তাঁকে দু’দফা ধর্ষণ করেছেন। এর মধ্যে প্রথম দফা ধর্ষণ করে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর, দ্বিতীয়বার ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল। ধর্ষণের সময় দেলোয়ারের সহযোগী আবুল কালামও তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় দেলোয়ার ও কালামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন ওই নারী। মামলাগুলো পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়। এ চাঞ্চল্যকর ঘটনায় সে সময় সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

    রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
    ১০১১১২১৩১৪
    ১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
    ২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
    ২৯৩০