পুকুর পাড়ে অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেনের কবর

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার বড়খেরী ইউনিয়নে বড়খেরী গ্রামে একাত্তরের রণাঙ্গনের অকুতোভয় সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেনের কবরটি তাদের বাড়ির পুকুর পাড়ে অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে। জীবদ্দশায় ন্যায়-নীতি ও আদর্শ নিয়ে চলা ল্যান্স নায়েক আমির হোসেন ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন।
১৯৭১ সালে যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি বাংলাদেশ মিলিটারীতে যোগদান করেন। যার কারণে তাকে এলাকাবাসী ডাক নামে মিলিটারী মজনু হিসেবে চেনেন। আমৃত্যু দেশপ্রেমিক এই বীরযোদ্ধা ১৯৯৩ সালে অবসরে চলে যান এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে নিজ জন্মভূমিতে ফিরে আসেন। রাজধানী ঢাকার চাকচিক্যে আকৃষ্ট না হয়ে পিতৃভূমিতে এসে বসবাস শুরু করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মরহুম আমির হোসেন বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সক্রিয় যুদ্ধ করা অবস্থায় একবার বাড়িতে অসুস্থ পিতা-মাতাকে দেখতে এসে পার্শ্ববর্তী বাড়ির রাজাকার কমান্ডারের হাতে আটক হন। অসম সাহসী এ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকাররা যখন চোখ বেঁধে মেরে ফেলার জন্য উদ্যত হন, তখন আমির হোসেনের অসুস্থ পিতা রফিকুল হক হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে নিজের সহায়-সম্পত্তি যা কিছু আছে সব তাদের কাছে বন্ধক দেয়ার শর্তে প্রিয়পুত্রকে হায়েনাদের হাত থেকে রক্ষা করেনÑ এমনটাই জানালেন আমির হোসেনের বড় মেয়ে পারভীন বেগম। কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে আমির হোসেন রাজাকারের কাছে বন্ধক থাকা এসব সম্পত্তি উদ্ধার করে পিতাকে আবার তা ফিরিয়ে দেন।
পারভীন বেগম আরো জানান, আমার পিতা কখনো রাজাকারদের সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু তিনি জীবদ্দশায় দেখে গেলেন রাজাকারের গাড়িতে দেশের পতাকা পত্পত্ করে উড়ছে। যার ফলে তিনি আক্ষেপ করে বলতেন, ‘এই জন্যই কি দেশটাকে স্বাধীন করেছি?’
মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করছে বিধায় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে সত্যি গর্ববোধ করি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় দেশের এ কীতি সন্তানদের মূল্যায়নের মানসে তাদের কবরকে পাকা করা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়কগুলোর নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই আমরা আশা করছি আমার পিতার কবরকেও সরকারিভাবে পাকা করা হবে এবং আমাদের বাড়ির সামনের এ সড়কটিকে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন’ সড়ক নামে নামকরণ করা হবে।
পারভীন বেগম উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আমার দাদারা চার ভাই ছিলেন। তারা আপোষ বণ্টক মতে এ বাড়িতে দীর্ঘদিন বসবাস করার পর আমার পিতা পৈতৃক সূত্রে পাওয়া এ বাড়িতে জীবন পার করেছেন। বর্তমানে আমার বৃদ্ধা মা বাড়িতে একা থাকেন। কিন্তু বাড়ির পার্শ্ববর্তী ঘরের লোকজনের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে আমাদের সম্পত্তির উপর। তারা গালি-গালাজসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার মাকে বাড়ি ছাড়া করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু মাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তাই আমরা আইনগত কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছি না। এ ব্যাপারে একজন মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী (ভাতাভোগী) হিসেবে প্রশাসনের হস্তক্ষেপসহ ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন তিনি।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

    রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫১৬
    ১৭১৮১৯২০২১২২২৩
    ২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০