প্রধানমন্ত্রীর সেই পিয়ন জাহাঙ্গীরের কত প্রভাব, কত সম্পদ,তার স্বজরা ও পিএস কোটিপতি

জাহাঙ্গীর আলম
জাহাঙ্গীর আলম-ছবি: সংগৃহীত

সুবর্ণ প্রভাত নিউজ ডেস্কঃপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দূনীতিবাজদের সম্পর্কে বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, আমার বাসায় কাজ করে গেছে একজন পিয়ন ছিল, সেও নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক! হেলিকপ্টার ছাড়া নাকি চলে না। কি করে বানাল এ টাকা,যখন জেনেছি, তাকে বাদ দিয়ে কার্ড সিজ করে ব্যবস্থা নিয়েছি।’
প্রধান মন্ত্রীর এই বক্তব্য পর নোয়াখালী সর্ব মহলে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে। সবার মুখে মুখে একই কথা ৪০০ কোটি টাকার মালিক সেই পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ছাড়া আর কেউ নন।
তার বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের নাহারখিল গ্রামে। তার বাবা মৃত রহমত উল্যা ও ইউনিয়ন পরিষদ অফিসের কেরানী ছিলেন।
প্রধান মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়ে নোয়াখালী-১ সংসদীয় আসনের চাটখিল ও সোনাইমুড়ীতে জাহাঙ্গীর গড়ে তুলেছ নিজস্ব বলয়, রয়েছে অস্ত্রধারী সন্ত্রসী বাহনীও । এখনো এলাকার রাস্তাঘাট ছেয়ে আছে তার বড় বড় বিলবোর্ড ও পোস্টার এবং নানা কাজের উদ্বোধনী স্টোন।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা পেতে চেষ্টা করেছেন জাহাঙ্গীর আলম । নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত সহকারী নন বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস উইং থেকে সেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিয়ে অনৈতিক কাজ করছেন। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নিতে বলা হয়। এঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এই বিজ্ঞপ্তির পরে জাহাঙ্গীর তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন।
জানা গেছে, ৯০ দশকের দিকে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাড়ি সুধাসদনে আসা দলীয় নেতাকর্মীদের পানি খাওয়ানোর কাজ করতেন এই জাহাঙ্গীর আলম। জাহাঙ্গীরকে নেতাকর্মীরা তখন থেকে ‘পানি জাহাঙ্গীর’ নামে চিনতেন। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর থেকে তিনি নেতাকর্মীদের মাঝে পরিচিতি লাভ করেন । ওই সময় শেখ হাসিনার খাদ্য বহনকারী ছিলেন ।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর এক বিশেষ সহকারীর (বর্তমানে এমপি) মাধ্যমে গণভবনে যাতায়াতের সুযোগ পান জাহাঙ্গীর। ঢাকার ইপিজেডে ২০০৯ সালে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। দলীয় অন্য কেউ ঝুট ব্যবসায় হাত দিলে জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী পরিচয়ে ফোন করতেন। এই ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থ আয় করেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি এবং মন্ত্রী ও সরকারি উচ্চ পর্যায়ের দপ্তরে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী পরিচয় দিয়ে তদবির করতেন। চাকরি দেওয়ার নামে ও সরকারি টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে বিপুল টাকা আয় করেন তিনি।
আরো জানাযায়, জাহাঙ্গীর নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে জাহির করার জন্য ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনাকে বাঁচানোর গল্প বলে দিতেন । প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে এক সময় কর্মরত ছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের দুই মেয়াদের পুরোটা সময় ও পরে কিছু সময় ছিলেন। ওই পরিচয় দিয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করতেন। এই সময়ে জাহাঙ্গীর নোয়াখালীর কয়েকজন এমপিকে পাত্তা দিতো না,তার আচার আচরনেও এমন ভাব দেখা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর এপিএস পরিচয়দানকারী জাহাঙ্গীরের গ্রামের বাড়ি নাহারখিলে নিজস্ব ৪তলা আলিশান ভবন, বাড়ীর সামনে ৩ তলা মসজিদ। জেলা শহরের হরিনারায়নপুরে ৮ তলা ভবন, রামগঞ্জ-সোনাইমুড়ি সড়কের চাটখিল বাজার পেট্রোল পাম্প নির্মানধীন,খিলপাড়া পূর্ব বাজার গরুহাটা সংলগ্ন ১০ শতক জায়গাও রয়েছে তার। গাজীপুর জেলায় রয়েছে বিশাল প্রজেক্ট। জাহাঙ্গীর প্রভাব খাটিয়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাস্তার শত বছরের নাম পরিবর্তন করে তার বাার নামে রেখেছেন।
জাহাঙ্গীর নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর এপিএস পরিচয় দিয়ে তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কমিটির সহসভাপতির পদ বাগিয়ে নেন। এছাড়া এলাকায় চাকরি-বাণিজ্য, কমিশন-বাণিজ্য, প্রাইভেট বিদ্যালয় দখল, জমি দখল, ইটভাটা দখল, টেন্ডারসহ সন্ত্রাস চলতো তার নামে। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের হুমকি দিয়ে অনিয়ম করে কয়েকজনকে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করান। তার মধ্যে তার ছোট ভাই আলমগীরও রয়েছেন। জাহাঙ্গীর আলম তার ভাগ্নে মাসুদুর রহমান শিপনের মাধ্যমে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। প্রভাব খাটিয়ে এই শিপন কে দুইবার জেলা পরিষদের সদস্য নির্বচিত করে। অবৈধভাবে সেও কয়েক কোটির টাকার মালিক।
জাহাঙ্গীর আলমেরা ৫ ভাই। তাদের মধ্যে বড় ভাই মির হোসেন ছিলেন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি, বর্তমানে তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, আরেক ভাই আলমগীর হোসেন ছিলেন যুবদলের নেতা, বর্তমানে তিনি ৩ বারের খিলপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ছোট ভাই মনির হোসেন বর্তমানে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটিরসদস্য
জাহাঙ্গীর আলম ও তার ভাইদের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা না করায় এলাকার অনেককে পুলিশ ও নিজস্ব বাহিনী দিয়ে হয়রানি ও নির্যাতন করেছেন। এদের মধ্যে সানখালী গ্রামের ফিরোজ আলমকে চন্দ্রগঞ্জ থানার কয়েকটি মামলা আসমি করা হয়েছে। লটপটিয়া গ্রামের নিজাম নির্যাতন সইতে না পেরে অমেরিকায় চলে গেছে।
জাহাঙ্গীর আলম এর পিএস ছিলেন শাহাদাত হোসেন স্বপন। সেও কয়েক কোটি টাকার মালিক। স্বপন ক্যানাডা, অমেরিকাসহবিভিন্ন স্থানে সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলে এলাকার মানুষের মুখে মুখে। স্বপনকে দিয়ে তিনি আর্থিক সমস্ত কর্মকান্ড পরিচালনা করতেন জাহাঙ্গীর।
নোয়াখালীতে কয়েকজন পকেট সাংবাদিক রয়েছে জাহাঙ্গীরের। দুইটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে জেলা প্রতিনিধির একজন তার আত্মীয় । জাহাঙ্গীরের সহযোগীতায় ও তার নাম ভাঙ্গিয়ে প্রশাসনসহ বিভিন্নস্থানে দালালি করে এরা দুইজন কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সরকারিভাবে তদন্ত করলে এদের সম্পদের পরিমান বের হবে। এছাড়ারও ভুয়া পরিচয় দিয়ে আরেক কার্ডধারী সাংবাদিককে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর সঙ্গী করেছিল এই পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম।এ দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সব ব্যাংকে জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের হিসাব খোলার ফরমসহ যাবতীয় তথ্য আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো হিসাব থাকলে সেসব হিসাবের লেনদেন মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২–এর ২৩ (১) (গ) ধারার আওতায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলো।

শেয়ার করুনঃ

16 thoughts on “প্রধানমন্ত্রীর সেই পিয়ন জাহাঙ্গীরের কত প্রভাব, কত সম্পদ,তার স্বজরা ও পিএস কোটিপতি”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

    রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫
    ১৬১৭১৮১৯২০২১২২
    ২৩২৪২৫২৬২৭২৮