সুবর্ণ লাইফস্টাইল কর্ণার ডেস্ক : বর্ষাকালে বেশি ভিজে যাওয়া, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ ও গুমট আবহাওয়ার কারণে ত্বকে ঘাম, অ্যালার্জি, ঘামাচির মতো কিছু সাধারণ সমস্যা দেখা দেয়। এসব থেকে বাঁচতে করণীয় কী?
ঘাম : গরমে ঘাম হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা হয় ঘাম থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পর। অতিরিক্ত ঘামের সঙ্গে শরীরের দুর্গন্ধের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। বগলের নিচে, ঘাড়ে, হাত বা পায়ের তালুতেও ঘামের সমস্যা দেখা দেয় অনেকের। বিন্দিয়া বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি বলেন, ‘ঘাম শুধু অতিরিক্ত গরম থেকে নয়, আরো নানা কারণে হতে পারে। অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা থেকে বাঁচতে রোদ পরিহার করুন। রোদে গেলে ছাতা ব্যবহার করুন। এমন পোশাক বেছে নিন, যেটিতে ঘাম কম হয় কিংবা ঘামলেও তা দ্রুত শুকিয়ে যায়।’
কোনো কারণে ঘেমে গেলে দ্রুত মুছে নিন। শরীরের ঘাম শরীরে শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভুগতে পারেন। ব্যাগে টিস্যু রাখতে পারেন, যাতে দ্রুত ঘাম মুছে নিতে পারেন। একই পোশাক প্রতিদিন পরা থেকে বিরত থাকুন। পোশাক পরার আগে পাউডার লাগাতে পারেন শরীরে। কিছু পাউডার ঘাম প্রতিরোধে কাজ করে। এ ছাড়া দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে বডি স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন গোসলের অভ্যাস গড়ে তুলুন। এ সময় দিনে দুইবারও গোসল করতে পারেন।
অ্যালার্জি : অতিরিক্ত গরমে অনেকের অ্যালার্জি সমস্যা দেখা দেয়। আবার বৃষ্টি কিংবা বন্যার পানিতে ভিজলেও অ্যালার্জি দেখা দেয় কারো কারো মধ্যে। বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকার কারণেও অ্যালার্জির প্রকোপ বেড়ে যায়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অনারারি মেডিক্যাল অফিসার মেডিসিন, ডায়াবেটিস, চর্ম ও যৌন রোগের চিকিৎসক ডা. মো. রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘হাঁচি, কাশি এ সব কিছুই অ্যালার্জি সংক্রান্ত রোগ। সব হাঁচি আবার অ্যালার্জি সংক্রান্ত তা-ও নয়। অনেকের ত্বকে অযথা চুলকানি শুরু হয়। তিসংবেদনশীলতা হচ্ছে অ্যালার্জির মূল কারণ। এটি ভিন্ন রকম হয়। আবহাওয়ায় কত পরিমাণ অ্যালার্জির উপাদান ছড়িয়ে আছে তার ওপরও অ্যালার্জি সমস্যা নির্ভর করে।’
অ্যালার্জির কারণে ত্বকের সমস্যায় ত্বক লাল চাকার মতো ফুলে ওঠে। এর সঙ্গে অতিরিক্ত চুলকানি হয়। অনেক জায়গায় একত্রে হতে পারে বা নির্দিষ্ট জায়গায়ও হতে পারে। এই সমস্যা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটা চলে যায়। ২৪ ঘণ্টা পর আবার ফিরে এসে ভিন্ন জায়গায় চুলকানি হয়। পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন-এই সমস্যা উত্তরণে সহায়ক।
ঘামাচি : তীব্র গরমে ঘামাচির সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। ঘামাচিতে অতিরিক্ত চুলকানোর কারণে শরীরের নানা জায়গা লালচে হয়ে যায়। কিছু উপায় মেনে ঘামাচি থেকে সুরক্ষা পেতে পারেন। ডা. আলামিন সরকার বলেন, ‘শরীরে ঘাম বেশি জমতে দেবেন না। ঘামে ভিজে যাওয়া জামাকাপড় দ্রুত পাল্টে ফেলুন। এমন কাপড়ের জামা পরুন, যার মধ্য দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে। ঘাম ত্বকে লেপ্টে না থাকে। সুতি, আরামদায়ক ও হালকা রঙের ঢিলেঢালা জামা পরলে ঘাম দ্রুত শুকিয়ে যায়।’
খুব গরমে ও বেশি ঘেমে গেলে বাড়ি ফিরে দ্রুত ফ্যানে শরীর শুকিয়ে নিন। ঘর্মাক্ত জামা খুলে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে গোসল করে নিন। দরকার হলে এমন গরমে দুইবার গোসল করতে পারেন। এ সময় ঘর বদ্ধ করে রাখবেন না, জানালা-দরজা খুলে বাতাস চলাচল করতে দিন। শারমিন কচি দিলেন ঘামাচি থেকে বাঁচতে দুটি ঘরোয়া টিপস। চন্দনের প্রলেপ ত্বক শীতল রাখে। গোলাপজল আর চন্দনের মোটা পেস্ট তৈরি করে ঘামাচির ওপর লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে নিন। ঘামাচি থেকে রেহাই পাবেন। মুলতানি মাটি আর দইয়ের পেস্টও ত্বক ঝরঝরে রাখতে সাহায্য করে। এর মধ্যে খানিকটা গোলাপজলও মিশিয়ে নিতে পারেন। প্রলেপটা ঘামাচির ওপর মিনিট ১৫ লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে নিন।