মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান
আজ ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, আমাদের জাতীয় জীবনের একটি কলঙ্কজনক দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যগণ মানব ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকান্ডের শিকার হন। জাতির পিতার সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, পুত্র ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, দশ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, সহোদর শেখ নাসের, কৃষকনেতা আবদুর রব সেরনিয়াবাত, যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বেবী সেরনিয়াবাত, সুকান্ত বাবু, আরিফ, আব্দুল নাইম খান রিন্টুসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকেও এই দিনে ঘাতকেরা নৃশংসভাবে হত্যা করে। এই বর্বর হত্যাকান্ড শুধু বাংলাদেশে না, পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল।
আজকের এই শোকাবহ দিনে আমি মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ই আগস্টের সকল শহিদের রূহের মাগফেরাত কামনা করছি।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলা মায়ের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। এই মহান নেতা ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। আজীবন সংগ্রাম করে যাওয়া এই অকুতোভয় প্রবাদপুরুষের দেখানো পথ ধরেই অর্জিত হয়েছে বাঙালির স্বাধীকার, রচিত হয়েছে শোষকের নিষ্পেষণের যাঁতাকল থেকে মুক্তির ইতিহাস। ১৯৪৮ সালে ভাষার দাবীতে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্ব থেকে শুরু করে ৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালের যুত্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ৬২ এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ৬৬ এর ৬ দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচনে বাঙ্গালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। এজন্য তাকে বারবার শত্রুপক্ষের রোষানলে পড়তে হয়েছে, যৌবনের লম্বা একটি সময় সহ্য করতে হয়েছে কারাবরণের মত যাতনা। তবুও তিনি দমে যাননি। তাঁর সম্মোহনী নেতৃত্বের যাদুকরী প্রভাবে যে বাংলাদেশের অভ্যুদয় তিনি ঘটিয়েছিলেন তারই সফল পরিণতির সূচনা করেন ৭ই মার্চের ভাষণে। চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি উদ্বুদ্ধ করলেন প্রতিটি বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধে আত্বনিয়োগ করতে এবং পৃথিবীর মানচিত্রে এঁকে দিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের চিত্র।
পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম হত্যাকান্ড ঘটানো ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারলেও নিঃশেষ করতে পারেননি তাঁর স্বপ্ন, চেতনা ও আদর্শকে। বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতির অবিভাজ্য সম্পর্কের কোন পরিসমাপ্তি নেই। পৃথিবীর মানচিত্রে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান এবং বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বিশ্বসভায় বাঙালি জাতির সগর্ব উপস্থিতি স্মরণ করিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধুকে। বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের কালজয়ী এ সিংহপুরুষকে বাঙালি জাতি চিরকাল স্মরণ করবে শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও অপরিসীম ভালবাসা।
লেখক- জেলা প্রশাসক, নোয়াখালী