নিজস্ব প্রতিনিধি
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় সোমবার রাত ৯টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে প্রথম জামাতের ছাত্র মিশাল নূর হাদি (৯) নামে এক শিশুর মৃত্যু ও ১৭ শিশুর অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার ভোর রাতে মাদ্রাসা ও এতিমখানার ৬ জন শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন, হাফেজ মো. দাউদ ইব্রাহিম, হাফেজ মো. মিজানুর রহমান আহসান, হাফেজ মো. বেলাল হোসাইন, হাফেজ মো. হাসানুদ্দিন, হাফেজ মো. শাহেদুল ইসলাম ও প্রিন্সিপাল হাফেজ মো. ইসমাইল। পরে দুপরে মৃত মিশালের চাচা আহসান উল্লাহ বাদী হয়ে ৮ জন শিক্ষককে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরো ৫-৬ জনকে আসামী করে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ আটকৃতদের এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আজ বিকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করে। অপর দুই শিক্ষক মাওলানা মাইন উদ্দিন ও মাওলানা জহিরুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন । বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশের স্পেশাল বাঞ্চের ( ডিএসবি) ডি আই ওয়ান ছৈয়দ মোঃ ফজলে রাব্বী। তিনি আরো জানান.মিশালের বাবা আনোয়ার উল্লাহ প্রবাসে থাকায় তার চাচা মামলার বাদী হয়েছেন । পলাতকদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গঠন
জেলা প্রশাসন এ ঘটনায় তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে গতকাল সকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান এ তদন্ত কমিটি গঠন করেন। জেলা প্রশাসক জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তারিকুল আলমকে তদন্ত কমিটি প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
জানাযায়, সোমবার দুপুরে এতিমখানার ছাত্রদের জন্য গরুর মাংস রান্না করা হয়। দুপুরে রান্না করা গরুর মাংস রাতে ছাত্রদের রাতের খাবার দেওয়া হয়। প্রথম ব্যাচে ২০ জন খেতে বসে। খাবার শুরু করার পর মাংস দুর্গন্ধ অনুভূত হলে তারা মাংস খেয়ে ভাতের সঙ্গে মিশে থাকা ঝোল দিয়ে খাওয়া শেষ করে।
এর কিছুক্ষণ পর শিশুরা একে একে অসুস্থ হতে থাকে ও বমি করা শুরু করে। তাৎক্ষণিক শিক্ষকরা স্থানীয় একজন চিকিৎসককে ডেকে এনে ঘটনা জানালে তিনি অসুস্থ শিশুদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। শিক্ষকেরা অসুস্থদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক নিশানকে মৃত ঘোষণা করেন। আরো জানাযায়,মাদ্রাসা ও এতিমখানাটিতে ১২০ জন শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৬১ জন এতিম শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ শিশুর খাবায় সমস্যা হচ্ছে দেখে অন্যরা আর রাতের খাবার খায়নি। এ দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আরএমও সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম জানান, এতিমখানায় শিশুরা রাতের খাবার খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত পৌনে ১১টা থেকে সোয়া ১২টা সময়ে ১৮টি অসুস্থ শিশুকে হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে একটি শিশু আগেই মারা যায়। ১৭টি শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থ হওয়া অন্য শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। তিনি আরো জানান, চিকিৎসাধীন শিশুদের মধ্যে পারভেজ হোসেন মিরাজের(১০) অবস্থা গুরুতর । অন্যরা আশংকা মুক্ত ।