মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর নোয়াখালীর গৌরবময় ইতিহাস

Shuborno Provaat - সুবর্ণ প্রভাত

আলমগীর ইউসুফ : প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সংগ্রাম করতে অভ্যস্ত নোয়াখালীর মানুষ। তেমনি মানবসৃষ্ট দুর্যোগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেও জেলাবাসী কখনো পিছ-পা হননি। এ জেলার সাহসী মানুষ ১৯৭১-এর মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকহানাদার ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে হত্যা এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এর আগে বাঙালি জাতির স্বাধিকার আদায়ের প্রত্যেকটি আন্দোলন-সংগ্রামে নোয়াখালীর মানুষ, জনপ্রতিনিধি ও ছাত্রনেতারা যে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন তা অত্যন্ত স্মরণীয়। জেলার কৃতিসন্তান শহীদ সার্জেন্ট জহিরুল হকের আত্মত্যাগ স্বাধীনতার আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তুলেছে। ১৯৭০-এর প্রলয়ঙ্ককরী মহাপ্লাবনে (গোর্কি) লাখো মানুষের মৃত্যু ও বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। শোককে শক্তিতে পরিণত করে নোয়াখালীর সাহসী সন্তানেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতা আদায়ের সশস্ত্রযুদ্ধে। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্রযুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধরা পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের পরাজিত করে ৭ ডিসে¤¦র মুক্ত করে প্রাণপ্রিয় নোয়াখালীকে। এ যুদ্ধে ১৮২ জন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষ শহীদ হয়েছেন। আশ্রয় হারিয়েছেন হাজার হাজার পরিবার।


যুদ্ধের প্রস্তুতি : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে উজ্জ্বীবিত হয়ে নোয়াখালীর স্বাধীনতাকামী মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়। ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকহানাদার বাহিনী নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা শুরু করার পরদিন নোয়াখালী টাউন হলে গঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও স্পিকার আবদুল মালেক উকিলকে আহ্বায়ক ও নুরুল হক মিয়াকে (এমএনএ) সদস্য সচিব করে একটি কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটিতে ছিলেন বৃহত্তর নোয়াখালীর আওয়ামী লীগের অপর ৭ জন জাতীয় পরিষদ সদস্য ও ১৪ জন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য। জাতীয় পরিষদ সদস্যদের মধ্যে অধ্যাপক মোহাম্মদ হানিফ (বেগমগঞ্জ-উত্তর), আবদুর রশিদ মিয়া (রামগঞ্জ), খাজা আহমেদ (ফেনী), খালেদ মোহাম্মদ আলী (লক্ষ্মীপুর), এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন (হাতিয়া) এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরা হলেন, সহিদ উদ্দিন এস্কান্দার কচি (নোয়াখালী সদর), ছাকায়েত উল্যা এডভোকেট (বেগমগঞ্জ-দক্ষিণ), রফিক উল্যা মাস্টার (বেগমগঞ্জ-উত্তর), আবদুস সোবহান (সেনবাগ), আবু নাছের চৌধুরী (কো¤পানীগঞ্জ-দাগনভূঁইয়া), তালেব আলী (সোনাগাজী), এডভোকেট খয়ের উদ্দিন (ফেনী) এএফকে সাফদার (পরশুরাম), আবদুল মোহাইমেন (লক্ষ্মীপুর) এডভোকেট বিসমিল্লাহ মিয়া (লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ), এ এন এ চৌধুরী কালু মিয়া (রামগঞ্জ), এডভোকেট মোহাম্মদ উল্যা (সাবেক রাষ্ট্রপতি, রায়পুর) সিরাজুল ইসলাম (রামগতি)। এদের মধ্যে শুধুমাত্র বেঁচে আছেন নোয়াখালীর প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ হানিফ, রামগতির সিরাজুল ইসলাম, লক্ষ্মীপুরের খালেদ মোহাম্মদ আলী ও ফেনীর তালেব আলী।


নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরা ছাড়াও এ কমিটিতে অন্যদের মধ্যে নোয়াখালী সদরের মাওলানা খালেদ সাইফুল্যাহ, হাজী ইদ্রিছ মিয়া, কাজী মাহফুজুল হক মাধু মিয়া, খন্দকার আবদুল আজিজ, কাজী সোলাইমান এডভোকেট, এম এ আজিজ, সাংবাদিক কামাল উদ্দিন আহমেদ, এডভোকেট জয়নাল আবেদীন, এডভোকেট মমিন উল্যাহ, আবু ছাইদ, মিনাল কান্তি মজুমদার, সারোয়ার-ই-দ্বীন, বেগমগঞ্জের গাজী আমিন উল্যা, কো¤পানীগঞ্জের আলী ইমাম চৌধুরী, লক্ষ্মীপুরের আক্তারুজ্জামান ও নছির আহমেদ ভূঁইয়া কমিটির সদস্য ছিলেন। এর আগে নোয়াখালী সদর মহকুমায় সহিদ উদ্দিন এস্কান্দার কচি ও ফেনী মহকুমায় খাজা আহম্মেদকে আহ্বায়ক করে পৃথক দুটি কমিটি গঠিত হয়। এসব নেতারা জেলার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে সর্বস্তরের মানুষকে সুসংগঠিত করেছেন। জেলা শহর মাইজদীর টাউন হলে কন্ট্রোল রুম, পিটিআই, জিলাস্কুল, ল’ইয়ার্স কলোনি, ফেনীর মিজান ময়দান, মাদ্রাসা ও ফেনী হাইস্কুলে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। লক্ষ্মীপুর সদরসহ বিভিন্ন থানা সদরে এবং গ্রামগঞ্জেও চলে যুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণ। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা সব বয়সের মানুষ এ প্রশিক্ষণে অংশ নেন। জেলার ৮ জন জাতীয় পরিষদের সদস্যদের মধ্যে ফেনীর প্রিন্সিপাল ওবায়দুল্যাহ আওয়ামী লীগের এমএনএ হয়েও দেশের স্বাধীনতার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ভারত থেকে পালিয়ে আসেন এবং পরবর্তীতে পাকবাহিনীর দোসর গর্ভনর আবদুল মালেকের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন।
জেলা প্রশাসনের ভূমিকা : জেলা সংগ্রাম কমিটি গঠনের পরদিন তৎকালীন ডিসি মনজুরুল করিম ও এসপি আব্দুল হাকিম জেলার রাজনৈতিক নেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে নোয়াখালী সার্কিট হাউজে এক বৈঠক করেন। জেলা প্রশাসনের এ শীর্ষ দুই কর্মকর্তা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। চারদিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়। এ সময় এসপি আব্দুল হাকিম পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র দিয়ে ছাত্র, জনতা ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ২৬ মার্চ থেকে ২২ এপ্রিল নোয়াখালী ছিল হানাদার মুক্ত। পাকবাহিনী নোয়াখালীর দখল নেয়ার পর মুক্তিকামী মানুষকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতার জন্য এসপি আব্দুল হাকিমকে হানাদার বাহিনী শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং ১১ মে তাকে নোয়াখালী থেকে প্রত্যাহার করা হয়। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি অসুস্থ অবস্থায় মারা যান। ডিসি মনজুরুল করিমকেও পাকবাহিনী লাঞ্ছিত করে। তাকেও এ জেলা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। স্বাধীনতার পর মনজুরুল করিম ডিসি হিসেবে পুনরায় নোয়াখালীতে যোগদান করেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের এ সহযোগিতা নোয়াখালীবাসীর কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

প্রতিরোধ : প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিরোধ যুদ্ধ ছিল বিক্ষিপ্ত ও অঞ্চলভিত্তিক। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠিত হলে মুক্তিযুদ্ধে নবগতি সঞ্চারিত হয়। এ সময় ঢাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশের অধিকাংশ শহরাঞ্চল হানাদার বাহিনীর কবলিত হলেও বৃহত্তর নোয়াখালীর সমগ্র এলাকা ছিল পাকহানাদার মুক্ত। এ জেলায় ২২ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের পতাকা উড়েছিল। এখানকার প্রশাসন জেলার কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এর মধ্যে পাকসেনাদের আগমনের পথে ৪ এপ্রিল ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সুবেদার মেজর লুৎফর রহমান, সুবেদার সামছুল হক, সুবেদার ওয়ালী উল্যাহ, সুবেদার সিরাজ, সুবেদার এছাক ও সুবেদার তোফায়েলসহ মুক্তিযোদ্ধারা ফেনীর সিলোনিয়া, শুভপুর, ছাগলনাইয়া, মুন্সিরহাট, সোনাগাজীসহ বিভিন্ন স্থানে সশ্রস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এরপর এসব মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন দিনে লাকসামের বাঘমারা, নাথেরপেটুয়ায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় যুদ্ধে কয়েকজন পাকসেনা নিহত ও আহত হয়। পাকসেনাদের নোয়াখালী দখলের পথে ২২ এপ্রিল বগাদিয়ায় তুমুল যুদ্ধ হয়। এখানে সুবেদার ওয়ালীউল্যা আহত হন। পরবর্তীতে ফেনাঘাটায় আরেকটি সংঘটিত যুদ্ধে দুইজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ দুই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে সোনাইমুড়ীর পদিপাড়া মনু মিয়ার বাজার সংলগ্ন মিজিবাড়ির সামনের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পাকবাহিনীর নোয়াখালী দখল : ২৩ এপ্রিল পাকসেনারা নোয়াখালী দখল করে নেয়। ঐদিন পাকসেনারা বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুলে ক্যা¤প স্থাপন করে এবং পরদিন জেলা শহর মাইজদী দখল করে পিটিআইতে ক্যা¤প স্থাপন করে। পরবর্তীতে জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ক্যা¤প স্থাপন করে পাকসেনারা। এ সময় তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সহযোগিতায় জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, নারী ধর্ষণ, বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকবাহিনী নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল, বেগমগঞ্জের টেকনিক্যাল স্কুলে টর্চার সেলে এবং কালাপুলে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
গণহত্যা, গেরিলা ও সম্মুখযুদ্ধ : পাকসেনাদের নোয়াখালী দখলের পর ও নোয়াখালীমুক্ত হবার আগপর্যন্ত এ ৯ মাসে বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অসংখ্য যুদ্ধ হয়েছে। উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের মধ্যে সোনাইমুড়ী, বগাদিয়া, ফেনাঘাটা, চন্দ্রগঞ্জ, জমিদারহাট, কানকিরহাট, সিলোনিয়া বাজার, গজারিয়া, বেগমগঞ্জ থানা, চৌমুহনী ফাঁড়ি, কাবিলপুর, নদনা, খিলপাড়া, রাজগঞ্জ, চাটখিল, রামগঞ্জ, বসুরহাট, তাল মোহাম্মদেরহাট, বাঁধেরহাট, ওটারহাট, সেবারহাট, চাপরাশিরহাট, হাতিয়া, টুমচর, দালাল বাজার, রাজাপুর, শুভপুর, বিলোনিয়া ও ছাগলনাইয়াসহ আরো অনেক যুদ্ধ হয়েছে। ২১ নভে¤¦র কো¤পানীগঞ্জের তাল মোহাম্মদেরহাটে মিলিশিয়া বাহিনীর ক্যা¤প আক্রমণকালে সুধারাম থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও তৎকালীন ডাকসুর সমাজসেবা স¤পাদক অহিদুর রহমান অদুদ এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সোনাইমুড়ীর যুদ্ধে সুবেদার নুর মোহাম্মদ শক্রবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন।
শ্রীপুর হত্যাকাণ্ড : ১৫ জুন নোয়াখালী পৌরসভার শ্রীপুরে মেজর বোখারীর নেতৃত্বে পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আল-বদররা নির্মমভাবে ১১৫ জন নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে পাকসেনারা ধর্ষণ, বাড়িঘর, দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক লুটপাট চালায়। স্বাধীনতার পর এ গণহত্যায় শহীদদের স¥রণে আহমদিয়া হাইস্কুলের সামনে স্মৃতিফলক নির্মাণ করেন নোয়াখালী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা মরহুম রবিউল হোসেন কচি।
গোপালপুর হত্যাকাণ্ড : ১৯ আগস্ট বেগমগঞ্জের গোপালপুর বাজারে সাপ্তাহিক হাটের দিনে পাকসেনা ও তাদের দোসররা ৫১ জন নিরীহ মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। তাদের মধ্যে গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হায়দার চৌধুরী নসা মিয়াও ছিলেন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফর উল্যাহ এ স্থানে শহীদদের স¥রণে স্মৃতিফলক নির্মাণ করেন।
যুদ্ধের কমান্ডার জেলা ও থানা : বৃহত্তর নোয়াখালীর বিএলএফের প্রধান ছিলেন সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন এডভোেেকট মমিন উল্লাহ, মোহাম্মদ উল্যাহ ও এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান লুতু এবং জেলার রাজনৈতিক সমন¦য়কারী ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। বৃহত্তর নোয়াখালী জেলায় বিএলএফকে (মুজিব বাহিনী) ৪টি জোনে বিভক্ত করা হয়। জোনাল কমান্ডার ছিলেন এডভোকেট মোঃ শাহজাহান (বেগমগঞ্জ), একরামুল হক (লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ-রায়পুর), মোশাররফ হোসেন (রামগতি-হাতিয়া) ও ভিপি জয়নাল আবেদীন (ফেনী)। তাদের অধীনে ডেপুটি জোনাল কমান্ডার বেগমগঞ্জের আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া, ডা. আনিসুর রহমান ও সাহাবুদ্দিন মিন্টু, লক্ষ্মীপুর-রায়পুর-রামগঞ্জে সাকায়েত উল্যাহ ও আনসার উদ্দিন, রামগতি-হাতিয়ায় শাহ আবদুল মাজেদ, আমির হোসেন মাস্টার ও নিজাম উদ্দিন মাস্টার এবং ফেনীতে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, কাজী ফরিদ আহাম্মেদ ও আবদুল কাদের।
নোয়াখালী ছিল মুক্তিযুদ্ধের ২নং সেক্টরের অধীনে। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ। পরে মেজর সারেক চৌধুরী, মেজর হায়দার দায়িত্ব পালন করেন এবং সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্ণেল জাফর ইমাম। তিনি তখন ১০নং ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন। অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য, ইপিআর, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন¦য়ে গঠিত মুক্তিফৌজ (এফএফ, এনএফ, সিএনসি, স্পেশাল ও গেরিলা)। জেলার অভ্যন্তরে এ বাহিনীর সার্বিক কার্যক্রম শুরু হয় সুবেদার মেজর লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে। পরে তিনি ১৩নং কো¤পানীর কমান্ডার নিযুক্ত হন। মুক্তিফৌজকে কয়েকটি জোনে ভাগ করা হয়। এসব জোনাল কমান্ডারদের মধ্যে রয়েছেন নায়েক সুবেদার ওয়ালী উল্লাহ, সুবেদার সামসল হক, সুবেদার এছাক, রহুল আমিন ভূঁইয়া, কমান্ডার রফিক উল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ ও মোহাম্মদ উল্যাহ। তখন মুজিববাহিনীর থানা কমান্ডার ছিলেন নোয়াখালী সদরে অহিদুর রহমান অদুদ, বেগমগঞ্জে আবদুল মান্নান কমিশনার, কো¤পানীগঞ্জে বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেনবাগে শৈলন অধিকারী/মোঃ ফারুক, রামগঞ্জে সাকায়েত উল্লাহ, হাতিয়ায় অধ্যাপক ওয়ালি উল্যাহ, লক্ষ্মীপুরে আওম সফিক উল্যাহ, রায়পুরে নবী নেওয়াজ করিম বকুল, রামগতিতে ফেরদৌস আহমেদ, ফেনীতে কাজী নুরনবী, সোনাগাজীতে মোশাররফ হোসেন, ছাগলনাইয়ায় আবদুল হান্নান ও পরশুরামে আবদুল মোতালেব।
জাতীয় পর্যায়ে কমান্ডার : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১৯টি জেলায় বিএলএফকে ৪টি জোনে এবং ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। এসব জোনে ও সেক্টরে নোয়াখালীর কয়েকজন কৃতিসন্তান কমান্ডার ও সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের চার নেতা বিএলএফএল’র ৪টি জোনের কমান্ডার ছিলেন। তাদের মধ্যে একটি জোনের জোনাল অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন নোয়াখালীর কৃতিসন্তান সিরাজুল আলম খান (বেগমগঞ্জ)। তখন অন্য জোনের দায়িত্বে ছিলেন মরহুম শেখ ফজলুল হক মনি, মরহুম আবদুর রাজ্জাক এমপি ও তোফায়েল আহমেদ এমপি। শেখ ফজলুল হক মনির অধীনে তৎকালীন ডাকসুর ভিপি ও স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক আসম আবদুর রব (রামগতি) সাব-কমান্ডার ছিলেন। সেক্টর কমান্ডারদের মধ্যে ৩নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ (রায়পুর-বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের অধিবাসী) বীরউত্তম, ৮নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর আহমেদ বীরউত্তম (চাটখিল), ১১নং সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তম (লক্ষ্মীপুর-বর্তমানে নেত্রকোনা), ১নং ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট জেক ফোর্সের কমান্ডার মেজর ওয়াকার হাসান বীরপ্রতীক (রামগঞ্জ), ৩নং ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট জেড ফোর্সের কমান্ডার লে. কর্নেল এস আই এম নুরনবী খান বীরবিক্রম (রামগঞ্জ), ৮নং ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট জেড ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল আমিন আহম্মদ চৌধুরী বীরবিক্রম (ফেনী), বিমান ও নৌবাহিনীর দুই কমান্ডারের মধ্যে সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল সুলতান মাহমুদ বীরউত্তম (দাগনভূঁইয়া) ও নৌবাহিনীর কমান্ডার এ ডব্লিউ চৌধুরী বীরউত্তম-বীরবিক্রম (ফেনী)।
নারী মুক্তিযোদ্ধা : তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফরিদা খানম সাকী ও তার ছোটবোন শিরিন জাহান দিলরুবা আলেয়া এ দুইজন নারী মুক্তযোদ্ধা। তারা দুইবোন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের বড় ভাই সাবেক এটর্নি জেনারেল মরহুম আমিনুল হকের তত্ত্বাবধানে আগরতলা লেম্বুছড়া ক্যা¤েপ মেজর শর্মা ও মেজর কে বি সিংয়ের কাছে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সাকী নোয়াখালী বিএলএফ প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েতের স্ত্রী। এ দুইজন ছাড়াও আরো ৯ জন নারী মুক্তিযোদ্ধার নাম গেজেটে প্রকাশ করা হয়। তারা জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেন।
শত্রুমুক্ত নোয়াখালী : ৬ ডিসে¤¦র রাতে পাকবাহিনী তাদের মূল ঘাঁটিগুলো থেকে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসে¤¦র ভোর রাতে বৃহত্তর নোয়াখালীর বিএলএফ প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েতের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ফজলে এলাহী, এডভোকেট মমিন উল্লাহ, মিজানুর রহমান, ফজলুল হক বাদল, মোজাম্মেল হক মিলন, জি এস কাশেম, রফিক উল্লা কমান্ডার, মাইন উদ্দিন জাহাঙ্গীর, মোহাম্মদ উল্যাহ, মোশারফ হোসেন, ভিপি জয়নাল আবেদীন, আবুল কাশেম ব্যাংকার, আলী কারী করিম উল্যাহ, কামাল উদ্দিন, আহাম্মদ চেয়ারম্যান, জয়নাল আবেদীন চেয়ারম্যান, লেদু মিয়া চেয়ারম্যান, সফিকুর রহমান, মোস্তফা কামাল, নুরুল আলম, মমতাজুল করিম বাচ্চু ও মিঞা মোহাম্মদ শাহজাহানসহ সকল বাহিনীর কয়েক শত মুক্তিযোদ্ধা জেলা শহরের রাজাকার-আলবদরদের ক্যাম্প নাহার মঞ্জিল, মাইজদী কোর্ট রেলস্টেশন, হরিনারায়ণপুর, দত্তেরহাট রাজাকার ক্যা¤প ও পাকহানাদার বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি পিটিআই হোস্টেলে আক্রমন চালায়। পরদিন বিকাল পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলে। এসময় কয়েকজন রাজাকার নিহত হয় এবং অনেকে পালিয়ে যায়। শক্রপক্ষের গুলিতে শহীদ হয়েছেন নোয়াখালী কলেজের অধ্যাপক আবুল হাসেম, ছাত্র নজরুল ইসলাম স্বপন, সরকারি কর্মকর্তা আবদুল জলিল, নাজির বসু মিয়া ও একজন অজ্ঞাত আনসার সদস্য। আহত হন মুক্তিযোদ্ধা মাইন উদ্দিন জাহাঙ্গীর। একই সময় সুবেদার লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে সুবেদার শামছুল হকসহ মুক্তিযোদ্ধারা বেগমগঞ্জে টেকনিক্যাল হাইস্কুলসহ বিভিন্ন ক্যাম্পের শক্রদের পরাজিত করে বিজয় পতাকা উড়িয়ে দেয়। শত্রুমুক্ত হয় নোয়াখালী। সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে স্বাধীনতার বিজয় পতাকা হাতে নিয়ে হাজারো মুক্তিকামী মানুষ জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে বিজয় উল্লাসে জেলা শহরসহ সারা জেলাকে প্রক¤িপত করে। জেলা শহরের আগের দিন ৬ ডিসে¤¦র ফেনী (মহকুমা) ও ৪ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর (থানা) এলাকা শত্রুমুক্ত হয়।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা : সরাসরি যুদ্ধে যেসব মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন অহিদুর রহমান অদুদ, নুরনবী বীরবিক্রম, রুহুল আমিন, নায়েক মুজাফফর হোসেন, নায়েক নুরুজ্জামান, সিপাহী আবুল বাসার, নুরুল হক, এরশাদ আলী, সালে আহম্মদ মজুমদার, আবদুর রব বাবু, মোস্তফা কামাল পাশা, আমানউল্যা ফারুক, কামাল উদ্দিন (ফেনী)সহ আরো নাম না জানা অনেক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন।
খেতাবপ্রাপ্ত ৩২ মুক্তিযোদ্ধা : মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, তাদের মধ্যে অসীম সাহস ও বীরত্বের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে এ জেলার ৩২ জন মুক্তিযোদ্ধা খেতাবপ্রাপ্ত হন। এদের মধ্যে ১ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৪ জন বীরউত্তম, ১১ জন বীরবিক্রম ও ১৬ জন বীরপ্রতীক রয়েছেন।
খেতাবপ্রাপ্তদের মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ হলেন সোনাইমুড়ী উপজেলার নান্দিয়াপাড়া গ্রামের শহীদ মোঃ রুহুল আমিন। বীরউত্তমদের মধ্যে চাটখিল উপজেলার কামালপুর গ্রামের মেজর জেনারেল মরহুম এম এ মঞ্জুর, বেগমগঞ্জ উপজেলার জিরতলী গ্রামের মরহুম ডা. মোঃ শাহ আলম, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর গ্রামের শহীদ সিপাহী নুরুল হক ও সেনবাগ উপজেলার বিষ্ণবপুর গ্রামের শহীদ সিপাহী এরশাদ আলী। বীরবিক্রমদের মধ্যে সদর উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের শহীদ সিপাহী আবুল কালাম আজাদ ও সালেহপুর গ্রামের ক্যাপ্টেন মোঃ আবুল হাসেম। বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মরহুম নায়েক সুবেদার মেজর মোঃ ইব্রাহীম ও শাহাজানাবাদ গ্রামের শহীদ নায়েক নুরুজ্জামান। চাটখিল উপজেলার ছোট জীবননগরের মরহুম সুবেদার ওয়ালী উল্যা, সিংবাহুড়া গ্রামের শহীদ হাবিলদার রুহুল আমিন, পাঁচগাঁও গ্রামের মরহুম হাবিলদার আবদুল হাকিম ও বদলকোর্ট গ্রামের শহীদ সিপাহী আবুল বাসার। সোনাইমুড়ী উপজেলার ওয়াসেকপুর গ্রামের শহীদ সিপাহী দেলোয়ার হোসেন ও পশ্চিম চাঁদপুর গ্রামের শহীদ নায়েক মোজাফ্ফর হোসেন। সেনবাগ উপজেলার শায়েস্তানগর গ্রামের মরহুম হাবিলদার তরিক উল্যা। বীরপ্রতীকরা হচ্ছেনÑ সদর উপজেলার পশ্চিম নুরপুর গ্রামের ক্যাপ্টেন মুনির আহম্মেদ। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরফকিরা গ্রামের সুবেদার আবুল হাসেম। বেগমগঞ্জ উপজেলার লতিফপুর গ্রামের সুবেদার আবুল কালাম। সোনাইমুড়ী উপজেলার বাগপাচরা রুহুল আমিননগরের মরহুম ল্যান্স নায়েক গোলাম মোস্তফা, নাটেশ্বরের মির্জানগর গ্রামের মরহুম সুবেদার মোঃ আবদুল গনি, পাপুয়া গ্রামের মরহুম হাবিলদার মোঃ ইব্রাহিম, বজরা গ্রামের হাবিলদার ওয়াজি উল্যাহ ও ওয়াসেকপুর গ্রামের শহীদ নায়েক মোঃ লোকমান। চাটখিল উপজেলার বালিয়াধর গ্রামের শহীদ হাবিলদার নুর মোহাম্মদ, দক্ষিণ রামদেবপুর গ্রামের হাবিলদার আবদুল হালিম, ছয়ানী টবগা গ্রামের মরহুম নায়েব সুবেদার আবদুর রাজ্জাক, ছয়ানী টবগা গ্রামের শহীদ হাবিলদার আবদুল গফুর ও বদলকোর্ট গ্রামের মরহুম সার্জেন্ট শহীদ উল্যা। সেনবাগ উপজেলার হরিণকাটা বাবুপুর গ্রামের শহীদ ল্যান্স নায়েক শাহ জালাল আহম্মেদ ও নবীপুর গ্রামের কর্পোরাল কাজী জয়নুল আবদীন। কবিরহাট উপজেলার রামেশ্বরপুর গ্রামের সিপাহী মোঃ আমিন উল্যা।


মুক্তিযুদ্ধের এ সংক্ষিপ্ত তথ্য প্রদান করেছেন জেলার প্রবীণ রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ হানিফ, বিএলএফ প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত, লে. কর্ণেল (অব.) এস আই এম নুরনবী খান বীরবিক্রম, এফএফ’র জোনাল কমান্ডার (অনারারী ক্যাপ্টেন) সুবেদার সামছুল হক, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মিজানুর রহমান ও বর্তমান কমান্ডার মোজাম্মেল হক মিলন। তাদের মতে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় অধিনায়কের দায়িত্ব পালন না করেও অনেক মুক্তিযোদ্ধা বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছেন এবং নাম জানা ও অজানা মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান কোনো অংশে কম নয়। তাদেরকে ছোট করে দেখার ও কোনো অবকাশ নেই। তাদেরকেও আমরা স্মরণ করি।
স্বাধীনতার পর বৃহত্তর নোয়াখালী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইউনিট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মিজানুর রহমান ও মরহুম সাইফুল আযম জাহাঙ্গীর এবং নোয়াখালী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ফজলুল হক বাদল ও মোজাম্মেল হক মিলন।
প্রসঙ্গত, এফএফ-এর জোনাল কমান্ডার (অনারারী ক্যাপ্টেন) সুবেদার সামছুল হক (৯১) গত ২০ মে ২০১৭ সোনাইমুড়ী সদর থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে তার গ্রামের বাড়ি জয়াগের উলুপাড়া ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। এ বীর মুক্তিযোদ্ধার আকস্মিক মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত ও গভীরভাবে শোকাহত। মরহুম সামছুল হকের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও তার শোকাহত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

লেখক : সম্পাদক, দৈনিক সুবর্ণ প্রভাত

শেয়ার করুনঃ

138 thoughts on “মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর নোয়াখালীর গৌরবময় ইতিহাস”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

    রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
    ১০১১১২১৩১৪
    ১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
    ২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
    ২৯৩০৩১