মেথি কেন খাবেন?

সুবর্ণ স্বাস্থ্য কর্ণার ডেস্ক : প্রাকৃতিক ফাইবার থেকে জন্ম নেয় মেথি। এগুলো চিবিয়ে গিলে খাওয়া যায় এবং পাকস্থলীর ফাঁকা স্থান এরা পূর্ণ করে। এতে ওজন কমানোর বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। খুব বেশি নয়, সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন সামান্য মেথি চিবিয়ে খান। এতেই স্পষ্ট বুঝবেন উপকার পাচ্ছেন। স্থূলতা কমাতে প্রতিদিন সকালে মেথি ভেজানো পানি পান করতে পারেন। দুটি আলাদা গ্লাসে পানি নিয়ে প্রতিটিতে এক টেবিল চামচ মেথি সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। এই পানি পেটের গ্যাসের সমস্যা দূর করে।
জ্বর ও খুসখুসে গলার জন্য : লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে এক টেবিল চামচ মেথি চিবিয়ে খেলে জ্বর থেকে মুক্তি মেলে। আবার এতে রয়েছে মুসিলেজ নামের এক ধরনের যৌগ, যা গলার খুসখুসে ভাব দূর করে। নারীদের স্বাস্থ্যগত বিষয়েও এর উপকারিতা রয়েছে। মেথিতে রয়েছে সাইটো-ইস্ট্রোজেন, যা নারীদেহে প্রোলাকটিন নামের হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটায়। এই হরমোন নারীদেহকে সুগঠিত করে। এ ছাড়া ঋতুকালীন বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয় মেথি।
চুল পড়া রোধে : স্বাস্থ্যহীন চুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে দেয় মেথি। চুল পড়া রোধে বহুকাল ধরে মেথির কদর চলে আসছে। এটি খেতেও পারেন, বা বেটে মাথায় দিতে পারেন। বিস্ময়কর উপকারিতা মিলবে। মেথি বাটা সারা রাত নারিকেল তেলের মধ্যে চুবিয়ে রেখে সকালে চুলে মাখুন। ঘণ্টাখানেক পর গোসল করে ফেলুন।
হজমে সহায়ক : বুকে বা পেটের ওপরের দিকে এসিডের প্রদাহ থেকে মুক্তি দেয় মেথি। সেই সঙ্গে বদহজমের সমস্যায় ওষুধের মতো কাজ করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এ সবই দেহের বিষাক্ত উপাদানগুলোকে বের করে দেয়। উপকার পেতে স্রেফ পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে খেলেই হবে। পানিটাও খেতে ভুলবেন না।
রক্তে গ্লুকোজ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে : দেহে গ্লুকোজের মাত্রা দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে মেথি। এর অ্যামাইনো এসিড অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন ক্ষরণে সহায়তা করে। এতে দেহে গ্লুকোজের পরিমাণ হ্রাস পায়। ফলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
উজ্জ্বল ত্বকের জন্য : রূপচর্চায়ও মেথিকে শীর্ষে রাখা যায়। সারা দেহে বয়ে বেড়ানো নানা ক্ষতিকর উপাদান চেহারায় বলিরেখা ফেলে দেয়। এ ছাড়া চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল সৃষ্টিতেও ওস্তাদ এগুলো। মেথি দেহের সব অপ্রয়োজনীয় উপাদান ঝেঁটিয়ে বিদায় করে।
খুশকি দূর করতে : বিশেষ ধরনের চুলে প্রচুর খুশকির উৎপাত ঘটে। মাথার শুষ্ক ও মৃত ত্বক থেকে খুশকি হয়। গোটা রাত পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে তা বেটে পেস্ট তৈরি করুন। এতে ইচ্ছে হলে দই মেশাতে পারেন। এরপর এই মিশ্রণ মাথার ত্বকে লাগান। মিনিট তিরিশেক রেখে ধুয়ে ফেলুন। খুশকি চলে যাবে।
সন্তান জন্মদানকে কিছুটা সহজ করতে : জরায়ুর সংকোচন ও প্রসারণের যন্ত্রণা কমাতে মেথির অবদানের কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে অতিরিক্ত খাওয়া হলে গর্ভপাত বা অপরিণত শিশুর জন্মদানের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
তছাড়া মেথি হতাশা বা অবসাদ, অতিরিক্ত শারীরিক ওজন ও অ্যালকোহল পানে অসুস্থতা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি বহু অসুখ ও শারীরিক সমস্যার জন্যও মেথির রস বেশ উপকারী।
মেথির রসে ‘সাপোনিস’ বা ‘ডাইওসজেনিন’ নামে এক ধরনের যৌগ পদার্থ আছে, যা মানবদেহের হরমোন স্তর বা এর পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করলে শরীরের রোগ জীবাণু দূর হয়। বিশেষত কৃমি মরে যায় এবং রক্তে চিনির মাত্রা কমে, রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা কমে যায়। বার্ধক্যকে দূরে ঠেলে দিয়ে তারুণ্যকে দীর্ঘস্থায়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে মেথি।
গবেষণায় দেখা গেছে, যে ডায়াবেটিক রোগীরা নিয়মিত মেথি খান, তাদের ডায়াবেটিসজনিত অসুখগুলো কম হয় এবং স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম। এক কথায় ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য মেথি শ্রেষ্ঠ পথ্য।
যাদের ডায়াবেটিস নেই মেথি তাদের জন্যও জরুরি। মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য কালো জিরার মতো মেথি পিষে খাওয়াটাও যথেষ্ট উপকার।
তবে খেয়াল রাখতে হবে, মেথি ভেজে পিষলে পুষ্টি সব নষ্ট হয়ে যাবে। রৌদ্রে শুকিয়ে নিয়ে খেতে মচমচে লাগবে। তবে মেথির স্বাদ তিতা ধরনের।
মেথি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরকে রাখে সতেজ। রক্তের উপাদানগুলোকে করে কর্মক্ষম। ফলে মানুষের কর্মোদ্দীপনাও বৃদ্ধি পায়।
তবে ছয় সপ্তাহে অন্তত দিনে দু’বার করে এর রস নিয়মিত পান না করলে তেমন উপকারিতা পাওয়া যাবে না। আপনি যদি মেথি সরাসরি খেয়ে ফেলেন তবে এটি আপনার ডায়েটে সহায়তা করবে।
এ ছাড়া প্রতিদিনের ফেসপ্যাকে মেথি গাছের নির্যাস ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ, কালো দাগ এবং ফুসকুড়ি নিরাময় হয়।
রোজ এক কাপ মেথি-চা খান! কী ফল পাবেন : এক মুঠো মেথিই এই ব্যথায় ম্যাজিকের মতো কাজ করতে পারে। ঋতুস্রাবের সময়ে বহু মহিলাই পেট ব্যথায় কষ্ট পান। অনেকেই পেন কিলার খান ব্যথা কমাতে। তাতে বরং ক্ষতিই হয়। অথচ অনেকেরই অজানা, এই সমস্যার সমাধান রয়েছে রান্নাঘরেই।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, এক মুঠো মেথিই এই ব্যথায় ম্যাজিকের মতো কাজ করতে পারে। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য মেথি কতটা উপকারী, তা অনেকেরই জানা। কিন্তু নন-ডায়াবেটিক মহিলাদের জন্যও এটি মহৌষধির মতো কাজ করে। এ ছাড়াও শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়াতে মেথির জুড়ি মেলা ভার।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যাচ্ছে, মেনস্ট্রুয়াল পেইন-এর জন্য মেথি খুব উপকারী। কী ভাবে খাবেন মেথি? রান্না করা তরকারি, তড়কা, পরোটা ইত্যাদির মধ্যে মেথি মিশিয়ে খাওয়াই যায়। কিন্তু সবথেকে ভাল ফল পেতে গেলে মেথির চা খান।
একটি পাত্রে জল নিন। তাতে মেথি মেশান। তার পরে ৫ মিনিট ধরে জলটি ফোটান। রং হলুদ হতে থাকলে আর ফোটানোর দরকার নেই। এ বারে মেথির দানা ছেঁকে নিন। ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার দু’দিন আগে থেকে এই জল নিয়মিত খেতে শুরু করুন।
ঋতুস্রাবের সময়ে মহিলাদের মেজাজেরও পরিবর্তন হতে থাকে। মেথি-চা খেলে মেজাজও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
মেথি বীজ থেকে তৈরি হচ্ছে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির মহৌষধ! : বয়সে হারিয়ে যাওয়া যৌবন পুনরুদ্ধারের খোঁজ পেলেন বিজ্ঞানীরা। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত পুরুষের বয়সজনিত যৌন দুর্বলতার সঠিক সমাধান সম্পর্কে মোটামুটি অন্ধকারেই ছিলেন চিকিৎ?সকরা। ভায়াগ্রা আবিষ্কার হলেও তার প্রয়োগ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক আজও শেষ হয়নি। অবশেষে সম্পূর্ণ ভেষজ উপাদান থেকে তৈরি হল মধ্যবয়সী পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির মহৌষধ।
এক কথায় মেথি খেলে আপনার গ্যাসটিক তথা পেপটিক আলসার সেরে যায়। ওজন কমাতে থাকে। জ্বর ও খুসখুসে গলার ভাল হয়। চুল পড়া রোধ হয়। হজমে সহায়ক হয়। রক্তে গ্লুকোজ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে। উজ্জ্বল ত্বক হয়। খুশকি দূর হয়। সন্তান জন্মদানকে কিছুটা সহজ হয়। যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায় ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

    রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
     
    ১০১১
    ১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
    ১৯২০২১২২২৩২৪২৫
    ২৬২৭২৮২৯৩০৩১