নজরুল ইসলাম, রামগতি (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোঃ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করার জন্য গত দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকার পর আজ রবিবার থেকে খুলেছে লক্ষ্মীপুরের রামগতির সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন পর আবার শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হওয়ায় শিক্ষর্থীদের পদচারণায় মুখরিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেকদিন পর শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে প্রবেশ দ্বারেই দাঁড়িয়েছিলেন শিক্ষকরা। উপজেলায় ৯৬টি সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়, ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪টি কলেজ, ১৩টি মাদ্রাসা এবং ২২টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে। প্রায় বেশীর ভাগ প্রতিষ্ঠানে এমনই দেখা যায়।
শিক্ষার্থীদের শারীরিক উপস্থিতিতে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় আগাম নির্দেশনায় আগে থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের বরণ করতে বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে বেশীরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শ্রেণিকক্ষ। উপজেলার অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছিল যেন উৎসবের আমেজ।
সকাল সাড়ে ৮টায় দেখা গেছে উপজেলা সদর আলেকজান্ডার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করে। প্রবেশ পথে প্রধান শিক্ষক সেলিনা আক্তার স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি তদারক করছেন। সহকারি শিক্ষক আবুল কাশেম, আকলিমা আক্তার, রুনু রানী ভৌমিক, শাহাবউদ্দিন ও ফাতেমাতুজ জোহরা বিদ্যালয়ের প্রধান পটকে শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষার পর স্কুল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করান। এর পর বিদ্যালয়ে আগে থেকে প্রস্তুত করা বেসিনে হাত ধুয়ে স্যানিটাইজার ব্যবহার করিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ করা হয় এবং দেওয়া হয় মাস্কও। একই ভাবে চর হাসান হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর সীতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলেকজান্ডার বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য চর ডাক্তার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম চর সেকান্দ্রর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলেকজান্ডার কামিল মাদ্রাসাসহ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতামূলক কথা বলা হয়।
আলেকজান্ডার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেয়েকে সঙ্গে করে নিয়ে আসা অভিভাবক সোহেল মাহমুদ বলেন, করোনার যে প্রাদুর্ভাবে দেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল, ভেবেছিলাম আর বোধহয় সন্তানদের পড়া-লেখা হবে না। কিন্তু প্রায় দেড় বছর পর হলেও মেয়েকে আবার স্কুল আঙ্গিনায় উপস্থিত করাতে পেরে আমি আনন্দিত। উচ্ছ্বসিত আমার মেয়েও। শিক্ষকদেরও দেখলাম আনন্দিত। শ্রেণি পাঠদানের পাশাপাশি করোনায় স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কেও মিক্ষার্থীদেরকে ধারণা দিচ্ছেন শিক্ষকরা।
চর ডাক্তার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুশাররফ হোসেন বলেন, সরকারি ভাবে তাদেরকে আগেই শ্রেণি কার্যক্রমের রুটিন দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতিদিন ৫ম শ্রেণির ক্লাস রয়েছে। রবিবার ৫ম শ্রেণি ছাড়াও ৩য় শ্রেণির ক্লাস ছিল। তার বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ছিল শতকরা ৯৫ ভাগ।
উপজেলা সদর আলেকজান্ডার মডেল সরকারি প্রাথমিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীদের শারীরিক উপস্থিতিতে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় উর্ধতন কতৃপক্ষের আগাম নির্দেশনায় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সকল ব্যবস্থা প্রহন করা হয়েছে। এর মধ্যে ইনফারেট থার্মোমিটার, হাত দোয়ার বেসিন, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, স্প্রে, স্যাভলনসহ যাবতীয় সারঞ্জাম রয়েছে। দীর্ঘদিন পরে বিদ্যালয় খুলে দেওয়ায় শিক্ষর্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল বিদ্যালয়টি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল কার্যক্রম শেষ করে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে শ্রেণি কক্ষে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং দুরত্ব বজায় রেখে বেঞ্চে বসানো হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা খুবই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তার বিদ্যালয়ে ৫ম ও ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল শতকরা ৯৫ ভাগ।
আলেকজান্ডার কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. তৈয়ব আলী বলেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ১০টায় শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়। আলিম, দাখিল পরীক্ষার্থী ও নবম শ্রেণির প্রায় দুইশ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত ছিল। দীর্ঘদিন বন্ধের পর প্রথম দিনের ক্লাসে শিক্ষার্থীরা খুবই আনন্দিত।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আহসান উপজেলার কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে বলেন। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাথমিকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুইটি শ্রেণির পাঠদান অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী একটি রুটিনও প্রণয়ন করা হয়েছে। রুটিন অনুযায়ী প্রতিদিন পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস রয়েছে। আজ পঞ্চম শ্রেণির সঙ্গে তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার পৌরসভা এলাকায় বিদ্যালয়গুলোতে আজ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল শতকরা ৯৫ ভাগ এবং উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল শতকরা ৭৫ ভাগ বলে তিনি জানান।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গেল বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সবধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়। সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় প্রথম ধাপে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে আজ থেকে। স্কুল খুলবে বলে তাই আগে ভাগেই শ্রেণি, অফিস কক্ষ থেকে শুরু সব কিছু ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আগমন উপলক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিরাজ করে সাজসাজ রব। স্কুল গুলোতে সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই শিক্ষার্থীরা স্কুল ড্রেস পরে অভিভাবকের হাত ধরে উপস্থিত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবদুল মোমিন বলেন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা মেনে বিদ্যালয় খোলার ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতনতামূলক পরামর্শ দিতে সবাইকে আগে থেকেই বলা আছে। সেভাবেই সকল কার্যক্রম চলছে।
শতবর্ষী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ইন্তেকাল
লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতিতে কাওছার আহমেদ (কয়ছর চেয়ারম্যান) নামের শতবর্ষী এক সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১১৫ বছর। রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় জানাযা শেষে উপজেলার চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের নিজ এলাকা গুচ্ছগ্রাম বাজার জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শনিবার রাতে ঢাকায় এক স্বজনের বাসায় বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা যান। মৃত্যু কালে তিনি তিন ছেলে তিন মেয়েসহ অসংখ্য আত্নীয় স্বজন শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।
কয়ছর চেয়ারম্যানের বড় ছেলে মোঃ নুরুল ইসলাম জানান তার বাবা ১৯৬৫ সালে উপজেলার চর আবদুল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নির্বাচিত হন। পরে মেম্বারদের ভোটে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তিনি একটানা দশবছর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে প্রত্যক্ষ ভোটে তিনি পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। রামগতি উপজেলার সবচেয়ে প্রবীন এই সাবেক চেয়ারম্যানের মৃত্যুতে জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের শতশত মানুষ জানাযায় অংশ গ্রহন করেন।
নদীর ভাঙ্গন দেখতে গিয়ে পাড় ভেঙ্গে বৃদ্ধ নিখোঁজ, আহত ৩
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মেঘনা নদীর ভাঙ্গন দেখতে গিয়ে নদীর পাড় ভেঙে আব্দুল মালেক (৭০) নামে এক বৃদ্ধ নিখোঁজ রয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুসহ আরও তিনজন। চাঁদপুর নদী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ষ্টেশনের একটি ডুবুরি দল চেষ্টা করেও আজ রবিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত নিখোঁজ বৃদ্ধের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। শনিবার বিকেলে উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়নের সোনালী গ্রাম এলাকায় মেঘনা নদীর তীরে এ ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ মালেক ওই এলাকার মৃত আলী আহাম্মদের ছেলে।
আহতরা হচ্ছেন একই এলাকার মো. রাসেল (১২), মো. জিহাদ (২৫) ও বশির আহাম্মদ (৭৫)। তাদেরকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় হযরত আবু বকর ছিদ্দিক ফোরকানিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আবুল ফাতাহ জানান, অমাবস্যার প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরে মেঘনা নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ ভাঙন দেখতে স্থানীয় লোকজন বিকেলে নদীর পাড়ে যায়। এ সময় ওই চার ব্যক্তিসহ কয়েক ফুটের একটি ফাটল হঠাৎ করে নদীতে ভেঙে পড়ে। এ সময় স্থানীয়রা রাসেল, জিহাদ ও বশিরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করলেও আব্দুল মালেক নামে এক বৃদ্ধ নিখোঁজ হন। খবর পেয়ে ফায়ার সর্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রামগতি ইউনিটের একটি দল ছুঁটে গিয়ে তাকে উদ্ধারে তৎপরতা চালান। পরে চাঁদপুর ষ্টেশনের একটি ডুবুরি দল গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালিয়েও ব্যর্থ হয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের রামগতি ষ্টেশন লিডার খোকন মজুমদার জানান, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক তারা ঘটনাস্থলে ছুঁটে গিয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রচন্ড স্রোতের কারণে নদীর গভীরে যাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। পরে চাঁদপুর ষ্টেশন থেকে এক দল ডুবুরি গিয়েও নিখোঁজ বৃদ্ধকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।