লক্ষ্মীপুর ও রামগতিতে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ, মা ইলিশ রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ

মো. আবদুল মালেক, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

সোমবার থেকে শুরু হয়ে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন মৌসুম। এই ২২ দিন লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার মেঘনা নদী এলাকায় মাছ ধরা যাবে না। এ সময় মাছ শিকার, পরিবহন, মজুদ ও বাজারজাতকরণ অথবা বিক্রি নিষিদ্ধ। এ আইন অমান্য করলে জেল অথবা জরিমানা এবং উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য অফিস থেকে জানা গেছে, প্রতিবছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে মিলিয়ে মোট ১৫ থেকে ১৭ দিন হচ্ছে ইলিশের ডিম ছাড়ার আসল সময়। এ সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ এসে লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় ডিম ছাড়ে। একটি বড় ইলিশ ২৩ লাখ পর্যন্ত ডিম ছাড়তে পারে। বেশি ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যে নিবিঘেœ যাতে মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পারে সে জন্যই ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করতে লক্ষ্মীপুরে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ মেঘনাপাড়ের জেলেদের সঙ্গে সচেতনতামূলক সভা করে আসছেন। পুলিশ প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ইলিশের প্রজনন মৌসুম সফল করতে কাজ করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২২ দিন জেলেদের মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে লক্ষ্মীপুরের ৪৩ হাজার ৪৭২ জন নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে ২০ কেজি করে ভিজিএফের চাল বিতরণ করবে সরকার। এছাড়াও প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করতে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লিফলেট, পোস্টার ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে জেলেসহ সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, বরফ কলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, অন্য কোথাও থেকে বরফ আসতে না দেওয়া, নদী সংলগ্ন খাল থেকে নৌকা বের হতে না দেওয়া, মাছঘাট সংলগ্ন বাজারের নৌকা ও ট্রলারের জ্বালানি তেলের দোকান বন্ধ রাখা, নদীর মাঝে জেগে উঠা চরের মাছঘাট গুলো বন্ধ রাখা প্রভৃতি।

এদিকে স্থানীয় জেলে আনোয়ার, মন্নান বেপারী, সফিউল্যা ও রাসেল মিয়াসহ কয়েকজন জানান, তারা আশায় ছিলেন নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে জালে। এতে বাড়তি কিছু উপার্জন হবে তাদের। কিন্তু চিত্র ছিল একেবারে উল্টো। নদীতে নেমে দিন-রাত খাটুনি করেও মিলেনি কাঙ্খিত ইলিশ। গত বছরের তুলনায় এবার মাছ ধরা পড়ছে অনেক কম। চার-পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে মিলছে এক হাজার টাকার মাছ। যে কারণে নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় সংসার চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। তাই ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে চাল নয়, পুণর্বাসনের জন্য মোবাইলের মাধ্যমে নগদ টাকা চান জেলেরা।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্রে ইলিশসহ সব মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এ সময়ে মাছ শিকার, পরিবহন, মজুদ ও বাজারজাতকরণ অথবা বিক্রি নিষিদ্ধ। এ আইন আমান্য করলে ১ থেকে ২ বছরের জেল অথবা জরিমানা এবং উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। নিষিদ্ধ সময় কেউ ইলিশ শিকারে নদীতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।

রামগতিতে বরফ কলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ

রামগতি (লক্ষ্মীপুর)  প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম জানান,

জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার মেঘনা নদীতে   আজ রবিবার রাত ১২টা থেকে ২২ দিন সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময় সারা দেশে ইলিশ আহরন, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ইলিশ মাছের প্রজনন অবাধ করার লক্ষ্যে মৎস্য সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ এর ১৩ ধারা অনুযায়ী মৎস্য অধিদপ্তরের ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের জেল-জরিমানাসহ বিভিন্ন  ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন বিষয়ক জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন টাস্কফোর্স ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছেন। র‌্যাব, পুলিশ ও কোস্টগার্ড এ কাজে সহায়তা করছে।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ২০ হাজার ১৬১ জন নিবন্ধীত জেলে রয়েছে। এর মধ্যে নিষেধাজ্ঞার সময়ে প্রায় ১৭ হাজার জেলের প্রত্যেককে ২২ দিনের জন্য ২০ কেজি চাল দেওয়া হবে।

তবে জেলেরা জানান, নিবন্ধিত কার্ড থাকা সত্ত্বেও প্রায় ৩ হাজার জেলে সরকারি সহায়তা পান না। দাদন ও আড়তদারদের থেকে ঋণ নিয়ে তাদের চলতে হয়। এ কারণে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাদেরকে বাধ্য হয়ে নদীতে নামতে হয়। নদীতে না নামলেও নিষেধাজ্ঞাকালীন তাদেরকে অলস সময় কাটাতে হয়। ধারদেনা করে চালাতে হয় সংসার।

মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন বিষয়ক উপজেলা টাস্কফোর্সের সদস্য সচিব সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন জানান, মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর প্রজনন মৌসুমে ২২দিন ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র রামগতি উপজেলার মেঘনা নদীসহ উপকূলীয় এলাকার চারটি ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার এ সময়ে সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ মৌলভীর চর, ঢালচর, সৈয়দ আওলিয়া ও লতা চাপালি পয়েন্ট এলাকার আশপাশে নদীতে ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্রে ডিম ছাড়ার জন্য আসে। তিনি আরও বলেন, উপজেলায় ২০ হাজার ১৬১ জন নিবন্ধীত জেলে রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার জেলের প্রত্যেককে ২২ দিনের জন্য ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।

উপজেলা টাস্কফোর্সের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল মোমিন জানান, উপজেলার মেঘনা নদীর এলাকায় মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ইলিশ রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টির জন্য মাছ ঘাট ও জেলে পল্লীতে শোভাযাত্রা ও সভা-সমাবেশ করা হচ্ছে এবং লিপলেট, পোস্টার ও মাইকের মাধ্যমে এলাকায় প্রচার- প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া মাছ ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, বিনিময় ও মজুত প্রতিরোধ এবং উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করাসহ মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি রামগতি আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যাবস্থাপক মো. রেজাউল করিম জানান, এ সময়ে অসাধু জেলে ও মাছ ব্যাবসায়ীদের বরফ গ্রহন প্রতিরোধে জেলা ট্রাস্কফোর্সের সিন্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে রামগতি ও কমলনগরের অন্তত ৪০টি বরফ কলের বিদ্যুুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

    রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
    ১০১১১২১৩১৪
    ১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
    ২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
    ২৯৩০৩১