মো. আসাদুল্যাহ মিলটন : হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনতার হৃদয়ের স্পন্দন ও এদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি-সমৃদ্ধির রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আজ ৭৫তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন দেশরত্ন শেখ হাসিনা, জয়তু শেখ হাসিনা।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেসার ঘর আলোকিত করে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। মুজিব দম্পত্তির জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা। যোগ্য পিতার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন সুদীর্ঘকাল ধরে।
সুবিশাল একটি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া শেখ হাসিনা আজ এ দেশের একজন সফল প্রধানমন্ত্রী। চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিটি ক্ষেত্রেই এগিয়েছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে আইকনিক একটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করেছেন তিনি। দেশকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
সত্যি কথা বলতে গেলে কি একজন শেখ হাসিনাকে নিয়ে লিখতে গেলে যে কয়েক হাজার পৃষ্ঠা লাগবে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তার গতিশীল নেতৃত্বে আমরা অর্জন করেছি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্যে স্বনির্ভরতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো, যোগাযোগ, জ্বালানী ও বিদ্যুৎ, বাণিজ্য, আইসিটি খাতে ব্যাপক সফলতা। আজকে বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময় বাংলাদেশ, উন্নয়নের বিস্ময় শেখ হাসিনা।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে আজ তিনি প্রশংসিত। শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে গত দু’বছরে করোনায় স্থবির হয়ে পড়া দেশের প্রবৃদ্ধি আজ এশিয়ার প্রায় সবগুলো দেশের ওপরে। তিনি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কূটনৈতিক দক্ষতা দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের জন্য কুঁড়িয়েছেন সুনাম। দেশের জন্য বয়ে এনেছেন গৌরব ও সাফল্য।
গত একযুগে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আমাদের অনেক অর্জন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সর্ববৃহৎ সেতু ‘পদ্মাসেতু’ নির্মাণ, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন, সমুদ্রসীমা বিজয়, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ হচ্ছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, মেট্রোরেল প্রকল্প চলমান, রূপপুর পরমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, নিজস্ব অর্থায়নে ৪৫০টি মডেল মসজিদ, সোয়া লাখ গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে ঘর প্রদান, দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন, প্রতিটি মানুষের কাছে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেয়া, শক্ত অর্থনীতি তৈরি করা, শতভাগ শিক্ষার হার অর্জন, করোনা সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা, এশিয়ান হাইওয়ে রোড প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে, দারিদ্র্যসীমা শূন্যের কোঠায়, নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণসহ অনেকগুলো মেগা প্রকল্প। এককথায়- শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বদলে গেছে বাংলাদেশ, বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ, বদলে যাবে বাংলাদেশ।
একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনার অবদান আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ইতোমধ্যে তিনি শান্তি, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য ভূষিত হয়েছেন অসংখ্য মর্যাদাপূর্ণ পদক, পুরস্কার আর স্বীকৃতিতে।
মুজিবকন্যার আজকের এ অবস্থান অনেক কষ্টে এসেছে। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিত্ব পেলেও রাষ্ট্রক্ষমতা কিন্তু পাননি। কেউ তাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়নি। এ জন্য তাকে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম করতে হয়েছে। ১৯৭৫ সালে ঘাতকের হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যার পর দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে পায়ে হেটে বেড়িয়েছেন গ্রামের পর গ্রাম।
১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেন। সেদিন সমগ্র দেশের অধিকারবঞ্চিত মুক্তিপাগল মানুষগুলো ছুটে এসেছিলেন তাকে একনজর দেখার জন্য রাজধানী ঢাকার কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী লাখো কণ্ঠের স্লোগানে প্রকম্পিত পুরো রাজধানী। থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
’৭৫-পরবর্তী বাঙালি জাতির যা কিছু মহৎ অর্জন তা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই অর্জিত হয়েছে। মুজিবকন্যার জন্মদিনটি আজ ১৮ কোটি বাঙালির জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন।
প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিনে তার দীর্ঘায়ু ও সক্রিয় জীবন কামনা করছি। পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা তার সহায় হোন; যাতে তিনি দেশ থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে পারেন এবং দেশবাসীকে সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও উন্নত জীবন গঠনে সহায়তা করতে পারেন।
লেখক : বার্তা সম্পাদক, দৈনিক সুবর্ণ প্রভাত