নিজস্ব প্রতিনিধি
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান আয়োজিত ‘স্থানীয় জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমে প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার প্রচার ও অন্তর্ভুক্তিকরণ’ শীর্ষক অধিপরামর্শ সভা আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব চৈতি সর্ববিদ্যা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রানের প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদ। গ্রামীণ বাংলাদেশের জলবায়ু অভিযোজনে প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার বিষয়ক জরিপের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রানের কর্মসূচি সমন্বয়ক উম্মে সালমা।
প্রচলিত সামাজিক অনেক পুরাতন ধ্যান ধারণার কারণে প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার বিষয়ে সাধারণত তেমন আলোচনা হয় না বলে উল্লেখ করেন সভার প্রধান অতিথি সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৈতি সর্ববিদ্যা বলেন, যে কোনো পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে পুরুষের আধিপত্য থাকায় নারীদের বিশেষ প্রয়োজনকেন্দ্রিক সহায়তাগুলো অগ্রাধিকার পায় না বা বিবেচনায় অনুপস্থিত থেকে যায়। সরকারি ত্রাণ বিতরণে কীভাবে নারী প্রজনন স্বাস্থ্য সহায়ক সরঞ্জাম, বিশেষ করে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহের ব্যবস্থা করা যায়, তিনি এই বিষয়ে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভার আলোচনায় বক্তারা বলেন, প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পারিবারিকভাবে সচেতনতা এবং শিক্ষা প্রয়োজন। একই সাথে স্থানীয় সরকারি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও আবাসিক প্রতিনিধি ডাঃ সাব্বির আহমেদ চৌধুরী বলেন, নারীরা পিরিয়ডকালীন অপরিচ্ছন্নতার ফলে সৃষ্ট রোগে একবার আক্রান্ত হলে তা সারাজীবন তাকে ভুগতে হয় এবং তার ফলে মানসিক স্বাস্থ্যও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
তারা দাবি করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন নারী ও শিশুরা। জলবায়ু অভিযোজন বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও, নারীদেরও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক কার্যক্রম এবং এইখাতে বাজেট বরাদ্দ নেই বললেই চলে। তাই, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভার প্রশমন এবং অভিযোজনে জেন্ডার এবং প্রজনন স্বাস্থ্যকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সুবর্ণচর উপজেলার ১২০ জন কিশোরী ও নারীদের ওপর পরিচালিত জরিপে দেখা যায় প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের কারোরই প্রাথমিক ধারণাও নেই। পিরিয়ডকালীন অপরিছন্নতায় দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা হতে পারে এই বিষয়ে ৪৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারীই কিছু জানেন না। বাকিরা জানলেও তাদেও মধ্যে ৫৯ শতাংশ এ সম্পর্কিত কোনো রোগের নাম বলতে পারেননি। সুবর্ণচর যেহেতু একটি উপকূলীয় এবং দুর্যোগপ্রবণ এলাকা- তাই জরিপে অংশ নেওয়া ৯৭ শতাংশ মনে করেন ত্রাণ এবং শেল্টার ব্যবস্থাপনান সময় স্যানিটারি প্যাড প্রদানের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় রাখা উচিত। এছাড়াও সভায় বক্তারা শ্রেণীকক্ষে প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক নিয়মিত পাঠদানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের পাশাপাশি নারীবান্ধব শৌচাগার নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রম কার্যকর করতে সরকার সদিচ্ছা এবং সহায়তার বিকল্প নেই।
সভায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন সৈকত সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোনায়েম খান, উন্নয়ন সংগঠন বন্ধন এর নির্বাহী পরিচালক আমিনুজ্জামান মিলন, সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম, সুবর্ণচর প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী বাবলু, উন্নয়ন সংস্থা নিজেরা করি’র অঞ্চল সমন্বয়ক পরিতোষ দেবনাথ, সাংবাদিক মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল প্রমুখ ।