হামাস-ইসরাইল যেভাবে চুক্তিতে পৌঁছেছে

সুবর্ণ প্রভাত অনলাইন ডেস্কঃ গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি রোববার স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ১১টা থেকে কার্যকর হয়েছে। এর ফলে ১৫ মাসের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের পর গাজার ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দার সীমাহীন দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী হামাসের হাতে থাকা ৩৩ ইসরাইলি জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইল তাদের হাতে ৯০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিবে। চুক্তির প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের মধ্যে এই বন্দি বিনিময় হবে।

একই সঙ্গে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা নির্বিঘ্নে তাদের বাড়িঘরে ফেরার অনুমতি পাবে। পাশাপাশি ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোকে প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করতে দেয়া হবে।

দ্বিতীয় ধাপে হামাসের হাতে থাকা বাকি জিম্মিরা মুক্তি পাবে এবং গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হবে। এর মাধ্যমে ‘স্থায়ী শান্তি পুন:প্রতিষ্ঠা হবে’।

তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপে গাজা পুনর্গঠন হবে-যা শেষ করতে কয়েক বছর পর্যন্ত লাগতে পারে। একই সঙ্গে মৃত ইসরাইলি জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেয়া হবে।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ধাপে রোববার তিন ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। বিনিময়ে ইসরাইলও চুক্তির শর্ত অনুযায়ী স্থানীয় সময় সোমবার ৯০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়। -বাসস

এদিকে গাজার লাখ লাখ উদ্বাস্তু ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। প্রায় ৬শ’৩০টি ত্রাণবাহী ট্রাক ইতোমধ্যে গাজায় প্রবেশ করেছে।

এটা গাজায় কার্যকর হওয়া দ্বিতীয় কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি, যার পথ ছিল দীর্ঘ ও কঠিন। যেভাবে এই চুক্তি কার্যকর হল :

টানা ৯৬ ঘণ্টার আলোচনায় চূড়ান্ত হয় গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি।

এএফপি এই খবর জানায়।

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগে কাতারে টানা ৯৬ ঘণ্টা ধরে চলে শ্বাসরুদ্ধকর আলোচনা। এতে মধ্যস্থতা করেন মার্কিন, মিশরীয় ও কাতারের কূটনীতিকরা। ১৯ জানুয়ারি রোববার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের বার্তা আনাদোলু এবং ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।

বাইডেন প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্যের দূত স্টিভ উইটকফের শেষ সময়ের উপস্থিতিকে এই চুক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে কৃতিত্ব দিয়েছেন।

ফিলিস্তিনকে ধ্বংস করে দেয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার ১৫ মাসের যুদ্ধের পর গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

চুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত ব্রেট ম্যাকগার্ক। যিনি ৫ জানুয়ারি থেকে এই অঞ্চলে ছিলেন এবং যুদ্ধবিরতি নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প বারবার সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, যদি তার ২০ জানুয়ারির শপথ গ্রহণের আগে হামাসের হাতে থাকা বন্দিদের মুক্তি না দেয়া হয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যে চরম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, নভেম্বরে ইসরাইল এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পর এই চুক্তিটি গতি পায় এবং গত ৯৬ ঘণ্টা ধরে আলোচনার পর এটি চূড়ান্ত হয়।

চুক্তির প্রথম পর্যায়ে হামাসের দিক থেকে একটি বাধা ছিল। তা হলো তারা কতজন জিম্মি আটক আছে বা জিম্মিদের মধ্যে কাদের মুক্তি দেয়া হবে তা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

ডিসেম্বরের শেষের দিকে হামাস জিম্মিদের তালিকা জানাতে সম্মত হয়, যা ইসরাইলের হাতে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য চুক্তিতে পৌঁছানোর চূড়ান্ত ধাপকে ত্বরান্বিত করে।

রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মিদের তালিকা না দেয়ায় যুদ্ধবিরতি আটকে যায়। জিম্মিদের তালিকা দিতে দেরি হওয়ায় ইসরাইল আবার গাজায় হামলা চালায়। এতে প্রাণ গেছে ১৯ জন ফিলিস্তিনি নাগরিকের। অবশেষে হামাস তালিকা দেয়ার পর স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ১১টায় হামাস তিন ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দেয়ার মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

শেয়ার করুনঃ

1 thought on “হামাস-ইসরাইল যেভাবে চুক্তিতে পৌঁছেছে”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

    রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
     
    ১০১১১২১৩১৪১৫
    ১৬১৭১৮১৯২০২১২২
    ২৩২৪২৫২৬২৭২৮