হরলাল ভৌমিক : ’৭১ সালে পাক হানাদারবাহিনী বেগমগঞ্জের কালাপোলের ওপর অসংখ্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করে লাশ খালে ফেলে দিয়েছিল। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পার হতে চললেও ওই স্থানকে আজো বধ্যভূমি ঘোষণা করা হয়নি। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে হত্যাযজ্ঞের নীরব সাক্ষী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে বেগমগঞ্জের কালাপোল।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বেগমগঞ্জ থানা মুক্তিযোদ্ধা বিএলএফ কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মন্নান ও উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ইউনিট কমান্ডার আবুল হোসেন বাঙ্গালি এবং শহীদ পরিবারের সদস্য এডভোকেট এ বি এম ফারকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ২২ এপ্রিল ১৯৭১-এ পাকবাহিনী লাকসাম থেকে পায়ে হেঁটে চৌমুহনী আসার পথে মেজর বোখারির নেতৃত্বে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে সড়কের দু’পাশের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। সে সময় চৌমুহনী শহরের নিকটবর্তী গ্রাম গনিপুরে হারিছ নামে একজন, মিরওয়ারিশপুরে ফরিদ আহমদ ও তার ছেলে এবং রেলস্টেশনের পাশে চারজনকে গুলি করে হত্যা করে।
এছাড়া চৌমুহনী শহরের হিন্দু অধ্যুষিত কুরীপাড়াসহ বেশ কয়েক স্থানে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাকবাহিনী শহরের চৌরাস্তায় অবস্থিত সরকারি কারিগরি উচ্চবিদ্যালয়ে ক্যাম্প স্থাপন করে। ২৫ এপ্রিল কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে আগত ব্রিগেডিয়ার আসলামের উপস্থিতিতে রেলস্টেশনে সভা করে রাজাকার বাহিনী গঠন করে। চৌমুহনী শহরের কলেজ রোডে বিসমোজিম কোম্পানির বিল্ডিং, কমিরপুর রোডের কালী বাবুর গ্যারেজ ও দক্ষিণ বাজার খোকা মিয়ার বিল্ডিংয়ে তিনজন কমান্ডারের নেতৃত্বে তিন রাজাকার বাহিনী ও কারিগরি উচ্চবিদ্যালয়ে অবস্থিত পাকবাহিনী নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন এলাকায় হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং নিরীহ লোকজনকে ধরে কারিগরী উচ্চবিদ্যালয়ের টর্চার সেলে নিয়ে দিনভর নির্যাতন চালায়। পরে সন্ধ্যায় চৌরাস্তা সংলগ্ন উত্তরে অবস্থিত কালাপোলের ওপর নিয়ে গুলি করে খুন করে লাশ খালে ফেলে দিতো। নোয়াখালীতে পাকবাহিনী প্রথম প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় চৌমুহনী শহরের ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে চৌমুহনী-লক্ষ্মীপুর সড়কের ফেনাঘাটা নামক স্থানে।
২৭ এপ্রিল পাকবাহিনী লক্ষ্মীপুর যাওয়ার পথে মুক্তিবাহিনী এ স্থানে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। সেদিন পাকবাহিনী নির্বিচারে গুলি চালালে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ ১১ জন শহীদ হন। ১৯ আগস্ট বেগমগঞ্জের গোপালপুর বাজারে স্থানীয় লোকজন প্রতিদিনের মতো বাজারে কেনাকাটা করার জন্য আসেন। সকাল ১১টায় স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকবাহিনী গোপালপুর বাজারে পৌঁছে নিরীহ লোকজনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে ৫৪ জনকে হত্যা করে। এ কালাপোলের ওপর অসংখ্য নিরীহ লোক হত্যা করে লাশ খালে ফেলে দেয়া ছাড়াও যেসব নারী র্নিযাতনে মারা যেতেন তাদের লাশ বিদ্যালয়ের উত্তরে সীমানা দেয়ালের ভেতর মাটিচাপা দিতো। পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকারদের হত্যাযজ্ঞের ঘটনা শুধু কালাপোল নয়। বেগমগঞ্জের জিরতলী (দমদমা দিঘিরপাড়) ১৬ জন, আমানাতপুর (কমলা দিঘি সংলগ্ন) ১৩ জন, রাজগঞ্জ, জমিদারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের হত্যাযজ্ঞের কাহিনী মনে পড়লে এলাকাবাসী আজো আতংকে উঠেন।
এদিকে চৌমুহনী শহরের করিমপুর রোডের কালীবাবুর গ্যারেজে যে রাজাকার বাহিনী ছিল তারা ৪টি নৌকাযোগে ভারত যাওয়ার পথে ৬০-৬৫ জন হিন্দু নারী-পুরুষ ধরে এনে নির্যাতন করে হত্যা করে। বিভিন্ন সময় নেতা, মন্ত্রীসহ অনেকে বেগমগঞ্জ কলাপোল এলাকা পরিদর্শন করে এ স্থানকে বধ্যভূমি হিসাবে ঘোষণা করার কথা বললেও দীর্ঘ ৪৫ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। গোপালপুর, জিরতলী, আমিন বাজারসহ বিভিন্নস্থানে নোয়াখালী জেলা পরিষদের উদ্যোগে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। বেগমগঞ্জ সরকারি কারিগরি উচ্চবিদ্যালয়ের যে কক্ষটি পাকবাহিনী টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করেছিল সেটি বর্তমানে জেলা পরিষদ ’৭১ জাদুঘর হিসাবে রূপান্তর করেছে। কিন্তু বেগমগঞ্জের কালাপোল পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজো।
‘৭১-এর হত্যাযজ্ঞে নীরব সাক্ষী বেগমগঞ্জের কালাপোল
- সুবর্ণ প্রভাত
- জুলাই ১৮, ২০২১
- ৮:৩০ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুনঃ
সোনাইমুড়ী উপজেলা যুবদলের সভাপতি গ্রেফতার
•
নভেম্বর ২৯, ২০২৩
আয়কর বিবরণী জমার সময় বাড়লো দুই মাস
•
নভেম্বর ২৯, ২০২৩
ওবায়দুল কাদেরের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল
•
নভেম্বর ২৯, ২০২৩
- সর্বশেষ
- সর্বাধিক পঠিত
